Dainik Sangbad – দৈনিক সংবাদ
Image default
ট্রেন্ডিং

ভেনেজুয়েলায় রাস্তার ধারে পরে থাকে রাশি রাশি টাকা! কেউ কুড়ায় না! কি কারণে হয় এমন

এক বছর আগের কথা। ফেসবুকে রাস্তায় রাশি রাশি টাকা পড়ে থাকার কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়েছিল। সকলের মনে প্রশ্ন এমনটা কোথায়। কিভাবে টাকা রাস্তার ধারে এমন অবহেলায় পড়ে আছে। আসলে এই ঘটনাটি ঘটেছিল ভেনেজুয়েলায়। ভেনেজুয়েলা দক্ষিণ আমেরিকার এমন একটি দেশ যা প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতির কারণে এই দেশের এমন অবস্থা যে রাস্তায় টাকা পড়ে থাকলেও কুড়ায় না কেউই। ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়া সেই ছবি প্রসঙ্গে জানা যায় ‘একদল চোর ভেনিজুয়েলার একটি ব্যাংকে লুট করেছিল। কিন্তু তারা যে টাকা পেয়েছিল সেগুলি ছিল দেশটির মূল্যহীন পুরোনো নোট। সেই ভাবে এই টাকার কোন মূল্য নেই। তাই রাস্তায় ফেলে রেখে যায় চোরেরা। ভেনিজুয়েলার একসময়ের মূল্যবান টাকা এখন দামহীন। হাইপারইনফ্লেশনে ডুবেছে দেশ।’ মুদ্রাস্ফীতি কারণে ভেনেজুয়েলার টাকার এতই অমূল্য হয়েছে, সেটা দিয়ে আর কিছু কেনাকাটা করা যায় না। দোকানে গিয়ে সামান্য কিছু কেনাকাটা করতে গেলে আক্ষরিক অর্থেই বস্তা বস্তা টাকা খরচ করতে হবে।

কেন এমন করুন হাল?

এই সমস্ত কিছুর সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৯৯ সালে হুগো চাভেজের ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসার পর। সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারায় বিশ্বাসী প্রেসিডেন্ট ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রনেতা হন। তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করার সময় ভেনেজুয়েলার ৬০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। বেকার দূরীকরণে হুগো সরকারি তেল কোম্পানি পিডিভিএসএতে গণহারে নিয়োগ শুরু হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত এই প্রতিষ্ঠানে চাভেজ প্রায় দ্বিগুণ লোক নিয়োগ দেন। ফলে ২০০৬ সাল নাগাদ এর কর্মীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ১৫ হাজার।

দেশের বিশাল তেলের মজুত কাজে লাগান চাভেজ। লোকের পকেটে তখন টাকা, নানান সরকারি কৃচ্ছ্রসাধনের ব্যবস্থাও আছে। সেটা করতে ধীরে ধীরে সব ধরনের বাণিজ্য রাষ্ট্রায়ত্ত করা শুরু করেন চাভেজ। বাদ যায়নি বাড়ির নিচে করা এক ছোট মুদিদোকানও। সেবা থেকে শুরু করে কৃষি—সবকিছুই রাষ্ট্রের অধীনে আনেন চাভেজ। তাঁর চোখে বিপ্লবের স্বপ্ন, বলিভিয়ান বিপ্লব।
লাগে টাকা দেবে গৌরি সেন মনোভাবে বেতন বাড়িয়েছেন চাভেজ।

হুগো চাভেজ স্বদেশের দারিদ্র্য কমিয়ে ৩০ শতাংশে নিয়ে আসেন। জনমানসে আনন্দ থাকলেও, কিছু নড়বড়ে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত ভেনেজুয়েলার ভবিষ্যতের কফিনে পেরেক ঠোকা শুরু করে।

কৃষি থেকে শুরু করে মুদিদোকান এমনকি তেল উত্তোলন কোম্পানি—সবকিছুই রাষ্ট্রায়ত্ত করে ফেলায় বছরের পর বছর ঘাটতি বাজেট দিতে হয়েছে চাভেজ সরকারকে। কিন্তু সেদিকে মনোযোগ দেননি প্রেসিডেন্ট। তেলের বাজার চড়া, যত ঘাটতি আছে তেল বিক্রির টাকা দিয়ে মিটিয়ে ফেলা যাবে।

ধীরে ধীরে ডলারের বিপরীতে দাম কমতে থাকে বলিভারের। কালোবাজারি ধীরে ধীরে বাসা বাঁধতে থাকে ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির নিচে। কৃষির দিকে মনোযোগ সরতে থাকে সরকারের। যেহেতু তেল বিক্রি করেই ধুম-ধাড়াক্কা অর্থনীতি চলছে, বাকি সব চুলোয় যাক। সবকিছু রাষ্ট্রায়ত্ত হোক। সব বাণিজ্য, কৃষি, সেবা রাষ্ট্রায়ত্ত হওয়ায় কর দেওয়ার কেউ থাকছে না।

২০১৩ সালে ক্যান্সারে হুগো শ্যাভেজ পরলোকগমন করলে নিকোলাস মাদুরো হন তার উত্তরসূরি। তবে চাভেজের মতো কারিশমা ছিল না তাঁর। শ্যাভেজের ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তা, সাহস, কারিশমা- কোনোটাই মাদুরোর নেই। নতুর প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তায় ধস নামতে সময় লাগেনি। দুর্নীতি ও অপরাধপ্রবণতার লাগাম ধরতে পারেননি মাদুরো। অত্যধিক মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নিদারুণভাবে হ্রাস পায়।

বিপুল অর্থনৈতিক অগ্রগতি সত্ত্বেও চ্যাভেজের শাসন শুরুর ২০ বছরের মাথায় এসে ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি দাঁড়িয়েছে খাদের কিনারে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জোরালোভাবে উঠে এসেছে লাখ লাখ মানুষের দেশ ছাড়ার খবর। যারা দেশের ভেতরে আছেন তারাও ক্ষুধার যাতনা আর স্থাস্থ্যসেবার অভাবে দিশেহারা। রাস্তা ভরে গেছে ভিখারিতে। চলতি বছর মূল্যস্ফিতির পরিমাণ এক কোটি শতাংশ ছাড়িয়েছে। তেলনির্ভর অর্থনীতি পঞ্চাশের দশকের পর সবচেয়ে বেহাল দশায় পতিত হয়েছে।

Related posts

যৌন তৃষ্ণা মেয়েদের সর্বাধিক হয় কোন বয়সে ভেবে দেখেছেন? জানুন সঠিক তথ্য

News Desk

ছেলেকে সাথে নিয়ে মলে গিয়ে আর তাকে বাড়ি ফেরাননি স্বামী! ছেলের খোঁজে দিশেহারা মা

News Desk

জিন্স পড়তে না করেছিল স্বামী! এতে ক্রুদ্ধ স্ত্রী ঘটিয়ে ফেলবেন এমন ভয়ঙ্কর কান্ড, ভাবা যায় না!

News Desk