একটি দুটি নয় , গত ৪৩ বছর ধরে সিসা আবু দোহার পরিচয় একজন পুরুষ হিসাবে। সকলে জানেন নিজের স্ত্রীর মৃত্যুর পর একা মানুষ করেছেন তার মেয়েকেও। এমনকি মেয়েও জানেন তার বাবা তাকে বড় করেছেন।
এভাবেই গোটা পৃথিবীর থেকে নিজের পরিচয় গোপন করে রেখেছিলেন ৭০ বছরের মিশরের এই মহিলা। কিন্তু কেন! কি এমন দরকার পড়ল যে সিসা কে এত দীর্ঘ সময় পার করতে হল পুরুষ হিসাবে আত্মগোপন করে? আসলে মাতৃত্বই সিসাকে এই ভাবে পরিচয় গোপন করতে বাধ্য করেছে।
সিসা জানিয়েছেন ১৯৭০ সালে তার মেয়ে যখন তার গর্ভে সেই সময়ে বিয়ের সামান্য কিছু বছর পরেই স্বামীর মৃত্যু হয়। এরপর মেয়ে জন্মানোর পর তাকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েন তিনি। তারপরই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে ভাবেই হোক, নিজে উপার্জন করবেন। আর মেয়েকে বড় করে তুলবেন, বাবার অভাব কখনো বুঝতে দেবেন না।
স্বামী মারা যাবার পরে সিসার পরিবার অবশ্য চেয়েছিল তাকে আবার বিয়ে দিতে। কিন্তু নিজের সন্তানের কারণে আর বিবাহ করতে চাননি সিসা। সেই কারণেই শেষ পর্যন্ত নিজের পরিবার ছেড়ে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আর এরপরই শুরু হয় তার এই নতুন জীবন।অফিস কাছারি তে কাজ করার মতো পড়াশোনা জানতেন না তিনি। সেই কারণেই তিনি বাকি আর পাঁচজন পুরুষের মতো চুল কেটে ফেলে, মাথায় পাগড়ি বেঁধে , ঢিলা জামা কাপর পরে, আর গলা ভারী করে নিজের রূপ বদলে নেন তিনি। জুতো পালিশের কাজ করা শুরু করেন।
সিসা জানান, “প্রথম প্রথম পুরুষ সাজতে ভীষণ কষ্ট হতো। কিন্তু সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে সব কিছু মেনে নিয়েছি।” আসলে সেই সময় মিশরে কোনও মেয়ের পক্ষে পুরুষদের সমকক্ষ কাজ করা সম্ভব ছিল না। সামাজিক ভাবেই তা অসুবিধাজনক ছিল। তাই সিসা পুরুষ সেজে আত্মগোপন করে। নিজের সন্তানের জন্য তার এই মহৎ আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়েছে মিশর সরকারও। ইতিমধ্যেই সেই দেশের সরকার কর্তৃক ‘দেশের সেরা মা’ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি।