চারিদিকে যেন পুজোর আগাম খবর। শরতের নীল আকাশ, পেজা তুলোর মতন মেঘ, কাশ ফুল ইতিমধ্যেই জানান দিয়ে দিয়েছে যে আশ্বিন মাস এসে গেছে। আর মহালয়ার সাথে সাথে তো বলাই যায় দুর্গা পুজোর (Durga Puja) কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেছে। মহালয়ার মানেই দুর্গা পুজো শুরু। মহালয়ার (Mahalaya) দিনই দেবীপক্ষের শুরু আর পিতৃপক্ষের (pitri Paksha) অবসান। সেদিনই আক্ষরিক অর্থে মা দুর্গার আবির্ভাব সূচিত হয়। পুরাণে বলা আছে মহালয়ার দিন অসুর এবং দেবতাদের মধ্যে ভীষণ সংঘর্ষ হয়েছিল। এই মহালয়ার গুরুত্ব হিন্দু ধর্মে যথেষ্ট।
কৃষ্ণপক্ষের শেষ হয়ে শুক্লপক্ষ বা মাতৃপক্ষের সূচনায় আশ্বিন অমাবস্যার একটি নির্দিষ্ট ক্ষণকে হিন্দু ধর্মে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়া হয়েছে। মহালয়ার দিন পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ (Tarpan) করার রীতি প্রচালিত আছে। ‘তর্পণ’ শব্দটি এসেছে ‘তৃপ’ থেকে। এর অর্থ তৃপ্ত হওয়া। ভগবান, ঋষি ও পূর্বপুরুষ কে উদ্দেশ্য করে জল নিবেদনের মাধ্যমে তাঁদের আত্মাকে সন্তুষ্ট করার বিধি কে বলা হয় তর্পণ। ঈশ্বর ও পূর্বপুরুষদের নাম উচ্চারণ এর মাধ্যমে তাঁদের কাছে জীবনে শান্তি আর আশীর্বাদ প্রার্থনা করা হয়। পিতৃ এবং মাতৃ তর্পণের সময় জল, তিল, চন্দন, তুলসীপাতা ও ত্রিপত্রী ব্যাবহার করা হয় আর অন্যান্য তর্পণের সময় তিলের জায়গায় ধান অথবা যব ব্যবহার করা হয়।
পুরাণ রামায়ণ ও মহাভারতে, মহালয়া ঘিরে বর্ণিত আছে নানা কাহিনি। জেনে নিন বিস্তারিত।
রামায়ণ কাব্য অনুযায়ী ত্রেতাযুগে শ্রীরামচন্দ্র লঙ্কা জয় করে সীতাকে উদ্ধার করে আনার জন্য দেবী দুর্গার অকাল বোধন করেছিলেন। শাস্ত্রমতে দুর্গাপুজো বসন্তকালেই হয় অন্নপূর্ণা পূজা রূপে। শ্রীরামচন্দ্র অন্য সময়ে দুর্গাপুজো করেছিলেন বলে একে অকালবোধন বলা হয়। হিন্দু ধর্মে কোনো শুভ কাজের আগে প্রয়াত পূর্বপুরুষের উদ্দেশে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে হয়। শ্রীরামচন্দ্র মা দুর্গার পুজো করার আগে পিতৃপুরুষের উদ্দেশে তর্পণ করেন। সেই থেকে মহালয়ায় দিন তর্পণ করার রীতি প্রচলিত।
মহাভারত এক কাহিনী অনুযায়ী, কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধে মৃত্যু বরণ করার পর কর্ন স্বর্গে গেলে তাকে কেবল সোনা আর রূপো খেতে দেওয়া হয়। কর্ন এর কারণ জিজ্ঞেস করলে বলা হয় যে সে জীবিত অবস্থায় পিতৃপুরুষ কে জল দেয়নি। তখন কর্ন জানায় সে তার পিতৃপুরুষের পরিচয় সম্পর্কে অবগত ছিল না। তাই তাকে ১৫ দিনের জন্য মর্তে পাঠানো হয় যাতে কর্ণ পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে জলঅন্ন দান করতে পারেন। এই ১৫ দিনকেই পিতৃপক্ষ বলা হয় এবং এর শেষ দিনটিকে মহালয়া হিসাবে মানা হয়।