সেই দিনটা ছিল ২৬শে জুলাই ১৯৯৯ সাল। বহু বীরের বলিদানের বিনিময়ে পাকিস্তানের হাত থেকে পুনরুদ্ধার করা গিয়েছে কাশ্মীরের কার্গিল সহ অন্যান্য অধিকৃত এলাকা প্রায় তিন মাস প্রাণ বাজি রেখে যুদ্ধ করার পর। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ি ঘোষণা করলেন যে ‘অপারেশন বিজয়’ সফল হয়েছে। ভারতের যুদ্ধ জয়ের কথা সরকারিভাবে জানানো হয়। এই দিনটি প্রতি বছর উদযাপিত হয় ‘কার্গিল বিজয় দিবস’ হিসেবে এর পর থেকেই। তাই ‘কার্গিল বিজয় দিবস’ হিসেবেই ২৬ জুলাই দিনটি ভীষণ ভাবেই তাৎপর্যপূর্ণ গোটা দেশবাসীর কাছে। ঠিক কি হয়েছিল জানুন।
হঠাৎই ১৯৯৯ সালের মে মাসের শুরুতেই জানা যায়, কাশ্মীরি মুজাহিদিনের বেশে লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) পার করে কাপুরুষের মতো ভারতীয় সেনাদের ওপর হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানি সেনারা। যার ফলে বেশ কয়েকজন ভারতীয় সেনা বীরগতি প্রাপ্ত করেছেন। পাকিস্তানের মূল উদ্দেশ্য ছিল কার্গিল দখলের, লাদাখ এবং কাশ্মীরের মধ্যে যোগাযোগ ছিন্ন করা এই স্থানকে দখলে নিয়ে। ভারতীয় সেনা জওয়ানরা এর যোগ্য জবাব দিতে তৈরী হয়। ১৯৭১-এর সিমলা চুক্তি ভঙ্গ করে শ্রীনগর থেকে মাত্র ২০৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কার্গিলে যুদ্ধ শুরু হয় ৩ মে ১৯৯৯ ভারত সরকাররের থেকে নির্দেশ আসা মাত্রই। শেষপর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাদের পিছু হটতে বাধ্য করে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রায় ৬০০ জন বীর সেনার বলিদানে৷ এই যুদ্ধ পৃথিবীর কাছে পাকিস্তানের বিশ্বাসঘাতকতার জ্বলন্ত উদাহরণ। কারণ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ি গিয়েছিলেন লাহোর সফরে কার্গিল যুদ্ধের মাত্র দুই মাস আগেই। শীতে কাশ্মীর সীমান্তের কিছু অঞ্চলে তাপমাত্রা এতটাই নিচে প্রায় মাইনাস ৪০ ডিগ্রিতে নেমে যাওয়ার কথা মাথায় রেখে শীতকালে সেনা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেটা মাথায় রেখে একটি অলিখিত চুক্তি প্রতিবেশী এই দু’দেশের মধ্যেই হয়েছিল যে শীতকালে কোনওরকম সামরিক কার্যকলাপ করা যাবে না। অথচ পাকিস্তানি অনুপ্রবেশ ওই মারাত্মক শীতেই শুরু হয়েছিল।
যারা শহীদ হয়েছিলেন এই যুদ্ধে নিজের প্রাণ উৎসর্গ করে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রাইফেলম্যান সঞ্জয় কুমার, গ্রেনেডিয়ার যোগেন্দ্রসিং যাদব, ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা, ক্যাপ্টেন মনোজকুমার পান্ডে, ক্যাপ্টেন অনুজ নায়ার, ক্যাপ্টেন এন কেনগুরুসে, সেনাপ্রধান পদ্মপানি আচার্য, লেফটেন্যান্ট কেইশিং ক্লিফোর্ড ননগ্রাম, সেনাপ্রধান রাজেশ সিংঅধিকারী, কর্নেল সোনাম ওয়াংচুক, সেনাপ্রধান বিবেক গুপ্তাসহ আরও অনেকে।
আজ সোমবার সকালেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইটারে সেনাদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী রবিবার ‘মন কি বাত’-অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, কার্গিল যুদ্ধ ভারতের সামরিক বাহিনীর বীরত্ব ও শৃঙ্খলার প্রতীক, যা গোটা পৃথিবী সাক্ষী থেকেছে। তিনি আরও জানান, ভারত অমৃত দিবস হিসেবে পালন করবে এই দিনটিকে।