বরফে ঢাকা পাহাড়ের ঢালে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম শীকেদারনাথ। ভারতের উত্তরাখন্ডের গাড়োয়াল পর্বতে মন্দাকিনী নদীর তীরে অবস্থিত এই শিব মন্দিরটি৷ তবে, শীতকালে কেদারনাথ মন্দিরটি বরফে ঢাকা পড়ে যাওয়ায় মূর্তিগুলিকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়৷
কথিত আছে, আদি শঙ্কর বর্তমান স্থানে মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন৷ একটি বিখ্যাত জ্যোতির্লিঙ্গের জন্যই এই মন্দিরটি বিখ্যাত৷ পাণ্ডবেরা এখানে তপস্যা করেই শিবকে তুষ্ট করার জন্য এখানে শিবের পূজা করেন৷ যদিও মহাভারত মহাকাব্যেও এই মন্দিরটির উল্লেখ রয়েছে৷ এটি উত্তর হিমালয়ের ছোট চারধাম তীর্থযাত্রার অন্যতম৷ কিংবদন্তি, পুরাণ, জনশ্রুতি, তীর্থযাত্রীদের নানা অভিজ্ঞতা সব মিলিয়ে কেদারনাথ মন্দির চিররহস্যে ঘেরা।
কেদারনাথ শৃঙ্গের ইতিহাস:
পুরাণ মতে জানা যায়, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর মহাভারতে জ্ঞাতি হত্যার পাপ থেকে মুক্তি পেতে পান্ডবগন তীর্থ দর্শন করতে বেরিয়ে পৌঁছেছিলেন। সেই সময় তারা কাশীতে এসে জানতে পারেন ভগবান শিব তাঁদের দর্শন না দেবার জন্য পাহাড়ের কোলে আত্মগোপন করেছেন। সেখানে নাকি তিনি এক ষাঁড়ের ছদ্মবেশে লুকিয়ে রয়েছেন। এইভাবে খুঁজতে খুঁজতে তারা গৌরিকুণ্ডের কাছে সেই ষাঁড়কে মাটিতে মিশে যেতে দেখে ভীম জাপটে ধরেন। ভগবান তাঁদের হাত থেকে নিস্তার পেতে দৌর শুরু করলেন। এইভাবে দীর্ঘক্ষণ সময় পেরিয়ে মাটি ভেদ করে উপরে উঠে আসলেন বৃষরূপী মহাদেব। তাই কেদারনাথে বৃষের পিঠের কুজ জ্যোতিরলিঙ্গ হিসাবেই পূজা করা হয়।
কেদারনাথ মন্দিরটি একটি মন্দির নয়৷ পরপর পাঁচটি মন্দির একসঙ্গে রয়েছে এখানে৷ কথিত আছে, শিবের আলাদা আলাদা পাঁচটি অঙ্গ এখানে পড়েছিল৷ এই পাঁচটি মন্দির হল- কেদারনাথ, রুদ্রনাথ, কল্পেশ্বর, টুঙ্গানাথ, মধ্যমাহেশ্বর৷
রহস্যে মোড়া কেদারনাথের মন্দির ৷ যেখানে ৬ মাস বন্ধ থাকে পূজার্চনা ৷ এই মন্দির যখন বন্ধ করে নীচে নেমে আসা হয় তখন প্রধান পুরোহিত সেখানে একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখে আসেন ৷ কথিত আছে, ৬ মাস পর যখন মন্দিরের দরজা খোলা হয় তখনও দেখা যায় সেই প্রদীপ জ্বলছে ৷ বহুবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়েছে কেদারনাথ মন্দির। পাহাড় ধ্বসে ক্ষতি হয়েছে গোটা রাজ্যের। অথচ কেদারনাথের নন্দী মূর্তির গায়ে আঁচড়ও লাগেনি।