এমনিতে অহিন্দুদের পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দিরে (Puri Temple) প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়া নিষেধাজ্ঞা ছিলই। কিছুদিন আগে পর্যন্ত পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি বলে কোমরের বেল্ট, মানিব্যাগ নিয়েও শ্রীমন্দিরে ঢুকতে দিত না কর্তৃপক্ষ। মোবাইল ফোন বা ক্যামেরা নিয়ে ভক্তদের প্রবেশে বহুকাল নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেবায়েত বা পান্ডাদের ক্ষেত্রে প্রায় সব কিছুতেই ছাড় ছিল। কিন্তু এবার সেবায়েত, পান্ডাদের পাশাপাশি শ্রীজগন্নাথ মন্দিরের কর্মচারীদের প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট পোশাকবিধি বাধ্যতামূলকভাবে চালু হচ্ছে।
পরিচালন কমিটির সিদ্ধান্ত, মন্দিরের গর্ভগৃহে এবং পুজোর জন্য যে সেবায়েতরা আসবেন, তাঁদের ধুতি, পট্টবস্ত্র এবং গামছা থাকতে হবে। শুধু তাই নয়, মন্দিরের ভিতরে সেবায়েত যতক্ষণ থাকবেন, ততক্ষণ সরকার অনুমোদিত সচিত্র পরিচয়পত্র গলায় ঝোলানা বাধ্যতামূলক। শ্রীমন্দিরের নিজস্ব কর্মচারীদের ধুতির সঙ্গে সাদা শার্ট ও কাঁধে লোগো দেওয়া ব্যাজ এবং সচিত্র পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে রাখতে হবে। জগন্নাথধামে পুজো দিতে আসা কোটি কোটি ভক্তকে প্রকৃত সেবায়েতদের মাধ্যমে দেবতাকে অর্ঘ্য পৌঁছে দিতেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন শ্রীমন্দিরের প্রশাসক।
কারণ, অন্য বহু লোক নিজেদের পূজারি বলে দাবি করে গর্ভগৃহে প্রবেশ করে প্রভাবশালী পুরোহিত বলে জাহির করছেন। তাঁদের দাপট বন্ধে এমন পোশাকবিধি চালু বলে স্বীকার করেছেন মন্দির পরিচালন কমিটির প্রবীণ সদস্যরা। শ্রীমন্দিরের অন্যতম পূজারি বনমালী কুন্তিয়া বলেন, “যাঁদের পুজোর অধিকার নেই, তাঁরাও মন্দিরে এসে ভক্তদের ঠকিয়ে পূজারি সাজছেন। পোশাকবিধি চালু হলে ভক্তরা সঠিক ব্যক্তির হাত দিয়ে দেবতাকে পুজো দিতে পারবেন।”
কমিটির এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন মন্দিরের প্রধান দৈতাপতি জগন্নাথ সোয়াইন থেকে শুরু করে পুরীর রাজগুরু দেবীপ্রসাদ মহাপাত্র। “বিশ্বে সব ধর্মাচরণের একটা নির্দিষ্ট পোশাকবিধি আছে। জগন্নাথদেবের পুজোয় সেটা পূজারিদের মেনে চলা উচিত।” অনেক কমবয়সি কলেজ পড়ুয়া সেবায়েত বংশানুক্রমে পুজোর অধিকার পাওয়ায় তাঁরা জিন্স-টি শার্ট পরে মণ্ডপে চলে আসছেন বলে অভিযোগ। যদিও একাধিক প্যান্ট-শার্ট পরা সেবায়েতের বক্তব্য, “কোভিডের জেরে অনেক কম ভক্ত মন্দিরে আসছেন। বহুদিন ধুতি পরে খালি গায়ে এসে দাঁড়িয়ে থেকেছি, কেউ আসেননি। আর প্যান্ট-শার্ট তো খারাপ পোশাক নয়।”