উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন গ্রাম্য এলাকায় বহুল প্রচলিত এই গাছ। নাম , স্যানিটাইজার গাছ। করোনা আবহে যখন চারদিকে স্যানিটাইজার এর ব্যাবহার নিয়ে আবশ্যক বিধি , প্রয়োজন তখন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে রাসায়নিক স্যানিটাইজারের বিকল্প এই ভেষজ গাছ।
তবে উত্তরবঙ্গের এই স্যানিটাইজার গাছ আজকের নয়। করোনা ভাইরাসের নাম যখন সাধারণ মানুষের কাছে অপরিচিত ছিল তার বহু আগের থেকেই ওই অঞ্চলে এই উদ্ভিদের ব্যাবহার। গাছটির স্থানীয় নাম হল ‘টিতেপাতি’। এই গাছটির ইংরেজি নামটা হয়তো কারোর কারোর কাছে পরিচিত হতে পারে। ইংরেজিতে গাছটি কে Artemisia নামে ডাকা হয়। গ্রিক দেবী Artemis-এর নাম অনুসারে এই গাছের নামকরন করা হয়েছে। Artemisia এই উদ্ভিজ্জ গুল্মটি আসলে Asteraceae পরিবারের। এই গাছটি পৃথিবীর নানা স্থানে মাগওয়ার্ট, ওয়ার্মউড, সেজব্রাশ ইত্যাদি নামেও গাছটি পরিচিত।
এলাকার মানুষজন এই ভেষজ গাছটি বহুকাল ধরে ব্যবহার করে। এই গাছের সাহায্যেই করোনা আসার আগে থেকেই এই অঞ্চলের মানুষ কীটপতঙ্গর নানা অবাঞ্ছিত সমস্যা থেকে নিজেদের সুরক্ষিত করতেন। এমনকি উত্তরবঙ্গের এই গ্রামীণ অঞ্চলগুলোতে শ্মশানে কারো মৃতদেহ দাহ করে এসে বাড়িতে ঢোকার আগে শ্মশানযাত্রীদের শরীরে এই গাছের জল ছিটিয়ে দেওয়ারও প্রথা আছে। তারা মনে করেন এতে কোনও রকম সংক্রমণ হবে না। এই উদ্ভিজ্জ জল বাড়ির আশেপাশেও ছিটিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় লোকেরা বলেন এতে পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে রেহাই মেলে।
এমনকি এই করোনাকালে নিজেদের বাড়ি বা হাত ‘স্যানিটাইজড’ করতে এখানকার সাধারণ মানুষ এই স্যানিটাইজার গাছের পাতা জলে ভিজিয়ে শরীরে বা বাড়িতে ছিটিয়ে দিচ্ছেন। অঞ্চলের লোকের কোনও রাসায়নিক যুক্ত স্যানিটাইজার ব্যাবহারে সায় নেই , তাদের বিশ্বাস এই ভেষজ স্যানিটাইজারেই তাঁদের ঘর ,বাড়ি বা হাত জীবানু মুক্ত হয়ে যায়।
কিন্তু আদৌ কি এই গাছ ‘স্যানিটাইজড’ করতে সক্ষম? কি বলছেন উদ্ভিদবিদেরা?
তারা জানাচ্ছেন, এই উদ্ভিদটিতে রয়েছে নানা রাসায়নিক উপাদান। আছে কিছু এসেনশিয়াল অয়েল-ও। এই গোত্রের গাছগুলির মধ্যে রয়েছে এক ধরনের তীব্র গন্ধ। যা কিছু কিছু কীটপতঙ্গকে দূরে রাখে।
উদ্ভিদবিদরা আরও জানাচ্ছেন এই গাছ থেকে কীটপতঙ্গকে খুব সহজেই দূরে রাখা যেতে পারে। তবে, এই ভেষজ কেমিক্যাল স্যানিটাইজারের বিকল্প হতে পারে কিনা, এখনই এই বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।