বিঘের পর বিঘে জমি জুড়ে ফলানো টমেটো নিজেরাই নষ্ট করে ফেলছেন চাষিরা। রাস্তায় ফেলে টমেটোর উপর দিয়ে ট্রাক্টর চালিয়ে পিষে দিচ্ছেন তারা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে জারি হয়েছে লকডাউন। এর ফলে অনেক কষ্টে ফলানো টমেটোর দাম না পেয়ে হতাশায় দুঃখে এই পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন বিহারের মুজফরনগরের চাষিরা। চাষীরা জানান, ১০ বিঘা জমিতে টমেটো ফলাতে তাদের প্রায় ২ লক্ষ টাকা খরচ করতে হয়েছে। টমেটো চাষের জন্য ধারও হয়েছে। কিন্তু আপাতত যে দামে বাজারে টমেটো চাষীদের বিক্রি করতে হচ্ছে তাতে টমেটো ফলাতে খরচ হওয়া টাকার এক ভাগের তিন ভাগও উঠছে না। তাই প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে ফলা টমেটো এভাবেই নষ্ট করার পথ বেছে নিয়েছে চাষিরা। এই ঘটনা কে কেন্দ্র করে যথেষ্ট চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। টমেটোর সাথে সাথে অন্যান্য কিছু ফসলও নষ্ট করে দিচ্ছেন চাষিরা।
বিহারের মুজফরনগরের গঞ্জ বাজার অঞ্চলের চাষিরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন জায়গা জুড়ে হওয়া লকডাউনের ফলে ফসলের পাইকারি দাম বাজারে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। শুধুমাত্র ১ টাকা প্রতি কেজি এই দামে তাদের টমেটো বিক্রি করে দিতে হচ্ছে । যদি তারা চাষ করা টমেটো বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রী করতে চান, তাহলেও ১কেজি টম্যাটো প্রতি চাষীদের ৪ থেকে ৫ টাকা খরচ হয়েই যায় বলে জানান তাঁরা।
নিজের পরিশ্রমে প্রায় ২ লক্ষ টাকার টমেটো নষ্ট করে দেওয়া এক চাষি শম্ভু প্রসাদ জানিয়েছেন, ‘ প্রায় ১৫ হাজার মতো খরচ করতে হয়েছে তার বিঘা প্রতি টমেটো চাষ করতে গিয়ে। সেখানে টমেটো বিক্রী করার সময় বিঘা প্রতি নূন্যতম ৫ হাজার টাকা দাম পাচ্ছেন না। ১ টাকা বা তার থেকেও কম দামে কেজি প্রতিতে পাইকারিতে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন চাষীরা। এমনিতেই এতে করে যে পরিমাণ লস হবে, তার থেকে ফসল নষ্টই করে দিচ্ছি।’ আগে যেই ক্ষেত্রে রোজ অন্তত ২০ থেকে ২৫টি ট্রাকে করে টমেটো সরবরাহ করার প্রয়োজন হত, সেটা লকডাউনের সময়ে ২-৩ টে তে এসে ঠেকেছে। চোখের জল নিয়ে শম্ভু জানান, ‘নিজের হাতে ফলানো টমেটো এভাবে নিজেই নষ্ট করে দিতে হবে কল্পনার অতীত।’
লকডাউনের ফলে যানবাহন-ট্রেন চলাচল পরিষেবা আপাতত বন্ধ থাকায় কার্যত ভেঙে পড়েছে ফসল সরবরাহের চেইন। এর ফলে একদিকে যেমন চাষিরা তাদের ফলানো ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না তেমনই আবার শহরে বেড়ে যাচ্ছে কাঁচা-সবজির দামও।