ভয়ঙ্কর ঘটনার সাক্ষী নদিয়ার কল্যাণী। ঘরের ভেতরে একমাসের অধিক সময় ধরে মৃত মায়ের দেহ নিয়ে আগলে রেখেছিলেন ছেলে। কল্যানী শহরের ‘A’ ব্লকের একটি বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ ছাড়তে শুরু করলে প্রতিবেশীদের মনে সন্দেহ জাগে। তাঁরা মৃত মহিলার ছেলেকে এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন করলে তিনি সে সমস্ত প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। পয়লা জানুয়ারি দুপুর বেলা বাধ্য হয়ে বাড়িওয়ালা থানায় বিষয়টি জানান। পুলিশ এসে সেখানে পৌছলে সকলে হতবাক হয়ে যান। দেখেন ঘরের ভেতর রয়েছে ঐ বৃদ্ধার পচাগলা মৃতদেহ। কাপড়ে জড়ানো রয়েছে দেহটি। তারাই সেই পচা গলা মৃতদেহ উদ্ধার করে।
সূত্র অনুযায়ী জানা গেছে ঐ বৃদ্ধার নাম মায়া পাল। বয়স প্রায় পঁচাত্তর ছুঁই ছুঁই। বৃদ্ধার ছেলের নাম সঞ্জয় পাল। বয়স বছর পঞ্চাশের কাছাকাছি। পুলিশ বৃদ্ধার ছেলেকে এবং ওই বাড়িতে আসা যাওয়া ছিল এমন আরেক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। তাদের জিজ্ঞাসা করে জানা গেছে বৃদ্ধার পেনশনের টাকাতেই মা ছেলের সংসার চলত। কল্যাণী এ/৯/২৯৩ ঠিকানার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন বৃদ্ধা ও তাঁর ছেলে।
রানাঘাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কল্যাণী) শৌভোনিক মুখোপাধ্যায় জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মৃতা মায়া পালের ছেলে জানিয়েছেন, ২৮ নভেম্বর তাঁর মা মারা গিয়েছিলেন। তবে কীভাবে সেই বৃদ্ধা মারা যান তা জানতে মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ।
প্রতিবেশীরা এই বিষয়ে জানান, বেশ কিছুদিন বাড়ির বাইরে দেখা যাচ্ছিল না বৃদ্ধাকে। অথচ বাড়ী থেকে বেরোলেই দরজায় তালা লাগিয়ে যেতেন ছেলে। বাড়ির আশপাশ থেকে আসতে আসতে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করে শুক্রবার রাত থেকেই। শনিবার সেই দুর্গন্ধ আরও প্রকট হয়। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে আশে পাশের বাড়ির লোক এবং বাড়িওলার মনে সন্দেহ ছড়ায়।
বাড়িওয়ালা দেবব্রত সরকার শেষমেষ আর কোনো উপায় না দেখে শনিবার পুলিশে খবর দেন। দেবব্রত জানান, মা ও ছেলে দুজনে একই ঘরে থাকত।
কল্যাণীর পুর প্রশাসক তাপস মণ্ডল বলেন, ‘আমরা যতটা জানতে পেয়েছি ওই বৃদ্ধার পেনশনের টাকাতেই মা আর ছেলের সংসার চলত। মাকে হঠাৎ এই ভাবে হারিয়ে ছেলে খুবই অসহায় অবস্থায় পড়ে। হয়ত মানসিকভাবে আরও অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। বৃদ্ধার ছেলেকে সরকারি হাসপাতালে মানসিক চিকিৎসা করানোর ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী কালে যদি পুরসভার কোন প্রকল্প এর মাধ্যমে ওকে সাহায্য করা যায় সেটা দেখব।