বাঙালি খাবার ঝালপ্রধান। লঙ্কা ছাড়া যেন খাবার পানসে। পৃথিবীতে লঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে। লঙ্কা খেলে যে ভীষণ ঝাল লাগে এ তো সবার জানা কিন্তু গাছে ফলা লঙ্কা খেতে ঝাল কেন অনুভূত হয় তা জানেন কী? এটা বিষয়ে অনেকেই জানেন না। তাহলে জেনে নিন…
আসলে লঙ্কায় (chilli) ঝাল অনুভূতি হওয়ার পেছনে যে রাসায়নিক দায়ী তার নাম ক্যাপসাইসিন(Capsaicin)। কিন্তু ঝাল স্বাদের কোনো অনুভূতি নেওয়ার জন্য তৈরি হয়নি আমাদের জিভের স্বাদ কোরক। আমাদের জিভ কেবল চার ধরণের স্বাদ অনুভব করতে পারে। টক, মিষ্টি, তেতো আর নোনতা। তাহলে ঝাল বুঝি কি করে?
আসলে লঙ্কায় উপস্থিত এই রাসায়নিক এক ধরনের উত্তাপ তৈরী করে। সেই উত্তাপ অনুভব করি জিভে যেটা ঝাল হিসাবে অনুভূতি হয়। ঝাল আসলে কোন স্বাদ নয়। মানুষের জিভ ক্যাপসাইসিনের সংস্পর্শে আসা মাত্রই জিভে উপস্থিত TRPV1 এবং TRPA 1 নামক কোষগুলো উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এই উত্তেজনা স্নায়ুর মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্কে পৌঁছন মাত্রই মস্তিষ্ক যে অনুভূতি হয় সেই অনুভূতিটাই আসলে ঝাল লাগা। এই বিপদসঙ্কেত আমাদের মস্তিষ্কে পৌঁছলে মস্তিষ্ক সেই নির্দেশ পাঠিয়ে দেয় স্বাদ কোরকে। সাথে সাথে শুরু হয়ে যায় দ্রুত রক্ত চলাচল, ঘাম বের হওয়া, চোখ ও নাক দিয়ে জল বের হওয়া ইত্যাদি। ঝাল লাগার এই প্রক্রিয়াটিকে ‘কেমেস্থেসিস’ বলে। এটা ছাড়াও এডরফিন নামে এক শরীরে তৈরী পেইন কিলার ছড়িয়ে পড়ে সারা দেহে। এতে কিছুটা আরাম বোধ হয়। তাই ঝাল লাগলে যে চোখ দিয়ে জল বের হয় সেটা ঝালের অনুভূতি কে কম করার জন্য। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে পাখিদের ঝাল লাগে না কেন। আসলে ক্যাপসাইসিন জিভে লাগলে মানব দেহের জিভের মত কোষ উপস্থিত থাকে না। তাই তারা ঝাল অনুভব করে না। এই কারণেই টিয়া পাখির অন্যতম প্রিয় হচ্ছে লঙ্কা।
ক্যাপসাইসিন একটি স্বাদ-গন্ধহীন পদার্থ। আর লঙ্কার মধ্যে লুকিয়ে বসে থাকে এই পদার্থ। এই অনু না থাকলে লঙ্কা ঝাল হতো না। যেমন ক্যাপসিকাম এক প্রজাতির লঙ্কা হলেও উপস্থিত নেই ক্যাপসাইসিন তাই ঝাল হয় না। আবার নাগাল্যান্ডের লঙ্কায় এর উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি তাই এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ঝাল লঙ্কা হিসেবে বর্তমানে স্বীকৃত।