হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে হনুমানজীর পুজো বেশ গুরুত্বপূর্ন। সপ্তাহের রোজ পুজো করলেও মঙ্গলবারে হনুমানজির পূজার বিশেষ গুরুত্ব আছে। ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী মঙ্গলবার দিন লাল জবা ফুল এবং দ্রব্যাদি দিয়ে হনুমানের পুজো করলে জীবনে মনষ্কামনা পূর্ণ হয়। কিন্তু কেন মঙ্গলবারই হনুমান জীর পুজো করার রীতি যুগ যুগ ধরে প্রচলিত রয়েছে। হিন্দু পুরাণ শাস্ত্র অনুযায়ী এর পিছনে রয়েছে পৌরাণিক আখ্যান।
পুরাণ অনুযায়ী ভগবান হনুমান স্বয়ং শিবের অবতার। রামায়ণের বর্ণনা অনুযায়ী কেশরী এবং অঞ্জনা পুত্র হনুমান চৈত্র মাসের এক মঙ্গলবার পূর্ণিমা তিথিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাই সপ্তাহের মধ্যে মঙ্গলবার হনুমানের পুজো করা কে বেশি শুভ মনে করা হয়। এই দিনটি হনুমানকে উৎসর্গ করা হয়েছে। এই দিন হনুমানের পুজো করলে সাফল্য, সুখ, শান্তি পাওয়া যায়। মঙ্গলবার দিনটি হনুমান জী কে উৎসর্গ করা হয়েছে।
ধর্মবিশ্বাসীরা মঙ্গলবার অনেকে উপোস করে হনুমানের আরধনা করে। হিন্দু শাস্ত্রের কিছু পৌরানিক আর প্রাচীন কাহিনী অনুসারে এর পিছনে রয়েছে একটি গল্প। কী সেই গল্প…
প্রাচীন যুগে উত্তর ভারতের এক ঘন সুবিশাল জঙ্গলে নন্দা নামে এক সন্ন্যাসী এবং তাঁর স্ত্রী সুনন্দা বাস করতেন। সুনন্দা প্রথম মঙ্গলবার ভগবান হনুমানের উপোস করে পুজো করা শুরু করেন। এই ব্রত তিনি করতেন শুধুই ভক্তি থেকে কোন কিছু পাবার আশায় নয়। কিন্তু কোনো এক কারণে এক মঙ্গলবার তিনি উপোস করতে বিস্মৃত হন। প্রিয় ভগবানের উপোস করতে ভুলে গিয়ে তিনি ভীষণ দুঃখ পান মনে আর শপথ নেন আগামী সপ্তাহের মঙ্গলবার আসা অবধি তিনি সম্পূর্ন উপোসী থাকবেন। ভক্তকে ভীষণ কঠিন এই ব্রত পালন করতে দেখে হনুমানজি ভীষণ প্রসন্ন হন যে সুনন্দা কে আশীর্বাদ দেন যে তার এক কন্যা সন্তান হবে এবং সেই কন্যার শরীর থেকে প্রতিদিন সোনার অলঙ্কার বেরতে থাকবে।
সঠিক সময়ে হনুমানজীর আশীর্বাদ অনুযায়ী সত্যিই হয় এমনটা। কিন্তু রোজ সোনার অলঙ্কার পেতে পেতে সুনন্দা এতটাই লোভী হয়ে ওঠেন যে মেয়েকে কোনও দিন বিয়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়ী পাঠাবেন না এমন সিদ্ধান্ত নেন। এদিকে সোমেশ্বর নামের এক ভাল পাত্রের সন্ধান পেয়ে সুনন্দার স্বামী নিজের মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন সোমেশ্বরের সঙ্গে। এদিকে সোনার লোভে লোভী সুনন্দা লোভের খপ্পরে পরে তাঁর জামাইকেই মেরে ফেলেন। এদিকে স্বামীর অবর্তমানে কন্যা স্বর্ণলতার এমন হাল হয় যে খাওয়া-দেওয়া ছেড়ে স্বামীর জীবন প্রার্থনা করতে নিজেকে ঘরে বন্দি করে ফেলেন। কয়েক মাস ধরে ক্রমাগত এভাবে প্রার্থনা করতে থাকলে এক সময় মঙ্গলদেব স্বর্ণলতার এমন অবস্থা দেখে তাঁর সামনে এসে তাঁকে জানান যে তিনি যদি জলপান করেন, তাহলে মঙ্গলদেব তাঁকে তাঁর ইচ্ছা মতন দুটি বর দেবেন। স্বামীকে বাঁচানোর আশায় জল পান করে স্বর্ণলতা মঙ্গলদেবকে তার স্বামীর জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। আর দ্বিতীয় বর হিসেবে তার কাছে প্রার্থনা করেন, যদি কেউ মঙ্গলবার উপোস করবেন, তার জীবনে আসবে সুখ, সাচ্ছন্দ এবং শক্তি।