আমরা বিশেষত বাঙালিরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি বাঙালির সবথেকে বড়ো উৎসব দুর্গাপুজোর। মহালয়ের দিন পিতৃপক্ষের অবসান হয়। প্রায় ১৫ দিন ধরে চলে পিতৃপক্ষ। মহালয়ের দিন সূচনা হয় মাতৃ পক্ষের। মা দুর্গার আগমনের আগে পিতৃপক্ষ শেষ হয় পিতৃ তর্পন দিয়ে। কোনও ব্যক্তির মৃত্যু হলে তার আত্মার শান্তি কামনার্থে শ্রাদ্ধ শান্তি করা হয় এই দিন।
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, যেহেতু পিতৃপক্ষে প্রেতকর্ম (শ্রাদ্ধ), তর্পণ ইত্যাদি মৃত্যু-সংক্রান্ত আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়য়। দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে গণেশ উৎসবের পরবর্তী ভাদ্র পূর্ণিমা তিথিতে। উত্তর ভারত ও নেপালে ভাদ্রের পরিবর্তে আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষকে পিতৃপক্ষ বলা হয়।
এই পিতৃপক্ষের অবসানেই মহালয়ার দিন নদীর তীরে পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশে তর্পণে ব্রতী হন পিতৃহারা অনেকেই। জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে মনে করা হয় যে,এই তর্পণের কালে পূর্ব পুরুষরা এই সময় বছরে একবারই জলপান ফলে সেই দিন পূর্ব পুরুষরা তৃষ্ণার্ত হয়ে জল পেয়ে থাকেন বলে মনে করা হয়। পিতৃপক্ষের শ্রাদ্ধ ও তর্পণের বিশেষ গুরুত্ব ও নিয়মকানুন রয়েছে। পিতৃপক্ষের সময়কালে এবং শ্রাদ্ধ-শান্তির সময়, হিন্দু ধর্মে । কোন কারণ জানেন এর পিছনে রয়েছে ?
শাস্ত্র মতে, এই পিতৃপক্ষের সময়ের মধ্যে বহু পূর্ব পুরুষ কাকের বেশে পূর্ব আমাদের আশপাশে ঘোরাফেরা করেন। সেই জন্য এই সময় কাককে ভোজন করালে তা শুভ ফল দিতে পারে। আর তাই এই সময়ে বাড়িতে কাক আসা ভালো বলে মনে করেন অনেকে। এই কারণে অনেকেই শ্রাদ্ধশান্তির খাবার কাককে খাইয়ে থাকেন। এতে সংসারে শুভ ফল লাভ হয় বলে মনে করা হয়।
কাককে ঘিরে পুরাণের কাহিনী:
শাস্ত্রবিদ মনে করেন মানুষের মৃত্যুর পর তার আত্মা রূপান্তরিত হয় কাকে। রামায়ণের কথা অনুযায়ী রয়েছে,একবার কাককে লক্ষ্য করে শ্রীরামচন্দ্র তীর নিক্ষেপ করেন সীতাকে আঘাত করার জন্য । পরে তাঁর খারাপ লাগায় তিনি কাক কে আশীর্বাদ করে বলেন, যিনি ভক্ষণ করাবেন কাককে তিনি স্বয়ং নিজের পিতাকে ভক্ষণ করানোর সুখ অনুভব করবেন। এরপর থেকেই কাককে নিয়ে এমন মান্যতা রয়েছে।
দূর হয় কালসর্প দোষ:
পুরাণ অনুসারে, অমৃতের স্বাদ একবার কাক খেয়ে ফেলেছিল, এবং মনে করা হয় যে ফলে কোনও দুর্ঘটনা বা সমস্যা জনিত কারণে কাকের মৃত্যু হয়। এদিকে, বলা হয়, কাল সর্প দোষ কেটে যায় কাককে খাওয়ালে । ফলে কাককে ভোজন করানো বলে মনে করা হয়। অনেকেই সুখ পান কাককে ভোজন করিয়ে । কাঙ্খিত জিনিস সংসারে আসে ।