নির্বিঘ্নে আর অল্প সময়ে লম্বা দূরত্ব সহজেই পাড়ি দেওয়ার জন্য বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম হলো আকাশপথ। বিমানে চড়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করা কিন্তু বেশ সহজ। কিন্তু এখানেও আছে বিপত্তি! আকাশপথে কেউ ট্রাফিক সিগন্যাল বসিয়ে আপনার বিমান আটকে দেবে না বা বিশেষ কোনো ব্যক্তির চলাচলের জন্য আপনাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষাও করতে হবে না।
খুবই অদ্ভুত একটা প্রশ্ন হলেও সত্যি যে তিব্বতের উপর দিয়ে কেন প্লেন চলেনা। তিববতে দেশটির অধিকাংশ অঞ্চল প্রাকৃতিক কারণেই বলা হয় ‘নো ফ্লাই জোন’। আলোচনায় যাওয়ার আগে তিব্বত সম্পর্কে জেনে নেই।
তিব্বত হচ্ছে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের একটি আঞ্চলিক পৰ্যায়ের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল । যদিও তিব্বতের জনগণ তা মানতে রাজি নয় যে, তারা চীনের অংশ । আয়তনে ১২,০০,০০০ বর্গ-কিলোমিটার অঞ্চল নিয়ে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল (চীনের জিংজিয়াং অঞ্চলের পর দ্বিতীয় সৰ্ববৃহৎ অঞ্চল) । পার্বত্য এবং দুর্গম পরিবেশের অঞ্চল হওয়ার জন্য চীনের সবচেয়ে কম ঘনবসতিপূর্ণ প্রশাসনিক অঞ্চল ।
তিব্বত হলো এমন একটি জায়গা যেখানে ৬০০০ মিটারেরও এর বেশি উঁচু উঁচু পাহাড় থাকে। এমন অনেক পাহাড় রয়েছে যেগুলোর উচ্চতা ৮০০০ মিটারের চাইতেও বেশি হয়ে থাকে। সুউচ্চ পাহাড়ের জন্য তিব্বত বিখ্যাত। আর সম্পূর্ণ তিব্বত এমন উঁচু উঁচু পাহাড়ে ঘেরা। একটি কমার্শিয়াল প্লেন সাধারণত ভূমি থকে ৮০০০ মিটার উপর দিয়ে চলাচল করে। কিন্তু তিব্বতের পাহাড় গুলো এর থেকেও বেশি উঁচু। তিব্বতের পাহাড়-পর্বতগুলোর গড় উচ্চতা সমুদ্রতল থেকে ১৬,০০০ ফুট ওপরে। যে কারনে প্লেনের কাছে পাহাড় গুলো দেয়ালের মতো। এই উচ্চতা দিয়ে অধিকাংশ বাণিজ্যিক বিমান স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারলেও, জরুরি অবতরণ করতে হলে পাহাড়ের উপর তো আর বিমান নামানো সম্ভব না।
আমরা জানি যে, আমাদের বায়ু মণ্ডল ৫টি স্তরে বিন্যস্ত। পৃথিবী থেকে সবচেয়ে কাছের স্তরটি হচ্ছে ট্রপোস্পিয়ার যার উচ্চতা পৃথিবীর থেকে ৭ মাইল উপরে। আর পৃথিবী থেকে এভারেস্ট এর উচ্চতা ৫ মাইলেরও বেশি। যার ফলে বিমান চলতে হলে দুই স্তরের মাঝে চলতে হবে। এখানে অক্সিজেনের পরিমান কম হওয়ায় বিমান এই স্তর দিয়ে চলতে পারেনা।
কিন্তু মজার বিষয় হলো তিব্বতে কিন্ত বিমানবন্দর রয়েছে । পুরো তিব্বতে পাঁচটি বিমানবন্দরের অঞ্চল বাদে আর কোথাও বিমান চলাচল করতে দেখা যায় না। অর্থাৎ তিব্বতের উপর দিয়ে বিমান না গেলেও তিব্বতে কিন্ত বিমান ওঠা-নামা ঠিকই করে।