Dainik Sangbad – দৈনিক সংবাদ
Image default
ট্রেন্ডিং

১০০ বছর পেরিয়ে আজও ম্যারির ফাঁসির অপরাধে বহন করে বেড়াচ্ছে এই শহর! জানেন এর কাহিনী

সময়টা ১৯১৬ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর ৷ কিংস্পোর্ট নামক শহরের অনেকেই শহরে আসা এক সার্কাসের তাঁবুতে ভীড় জমিয়েছেন। সকলে সার্কাস দেখতে ব্যস্ত যে সময় হঠাৎই এক ঘটনায় হয় ছন্দপতন। সার্কাসের মঞ্চে একটি দুর্ঘটনায় সকলেই বাক্যহারা হয়ে যান। সকলের চোখের সামনেই সার্কাসে খেলা দেখানোর সময় ৩৮ বছর বয়সী ওয়াল্টার এলড্রিজ নামে এক যুবককে মাথায় তীব্র আঘাত করে মারডেরেয়াস ম্যারি। আসলে ম্যারি কোনও মানুষ নয়, সার্কাসের হাতি ৷ মাথায় চোট পেয়ে মঞ্চেই লুটিয়ে পড়ে এলড্রিজ ৷ সকলের চোখের সামনেই মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই মারা যান এলড্রিজ ৷ আতঙ্কে তখন সার্কাসের তাঁবুর ভেতর ছোটাছুটি পরে গিয়েছে৷ দৌড়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন দর্শকেরা ৷ তাঁবুর এক পাশে সেই সময় ম্যারি শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে।

সার্কাসে খেলা দেখিয়ে জন্য উনিশ শতকে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল মারডেরেয়াস ম্যারি ৷ চার্লি স্পাইকস ছিলেন সার্কাস মালিক৷ তিনি মাত্র ৪ বছরের ছোট্ট হাতিটিকে নিজের সার্কাস দলে নিয়ে আসেন। ম্যারি বুদ্ধি ছিল ভীষণরকম। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই তার সার্কাসের খেলা দেখতে আসা দর্শকদের মধ্যেও নামডাক হয় ম্যারির৷ একসময় কিংস্পোর্ট শহর থেকেও আসে সার্কাসের খেলা দেখানোর ডাক৷ শহরে তাবু ফেলতেই চার্লির কাছে এসে দেখা করেন ওয়ালটার এলড্রিজ ৷ চার্লির কাছে রাখে এক আজব অনুরোধ ৷ ম্যারির মাহুত হিসেবে সার্কাসে কাজ করতে চায় সে ৷ নাছোড়বান্দা এলড্রিজের আবদার মেনে শেষপর্যন্ত তাকে ম্যারির মাহুত হিসেবে নিযুক্ত করেন চার্লি৷ কিন্তু, এলড্রিজকে মাহুত রূপে কখনোই মানতে পারেনি ম্যারি ৷

দুর্ঘটনার দিন হঠাৎই মাহুতের কথা মানতে অস্বীকার করে ম্যারি। খেলা দেখানোর সময় প্যারেড চলাকালীন হঠাৎই দাঁড়িয়ে পড়ে ৷ এলড্রিজ অনেক চেষ্টা করতে থেকে ম্যারিকে কথা শোনানোর কিন্তু ম্যারি কিছুতেই না শোনায় শেষে মাহুত এলড্রিজ ম্যারিকে বার বার লোহার সূচালো রড দিয়ে খোঁচা দিতে থাকে ৷ এতেই রেগে যায় ম্যারি ৷ এলড্রিজকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে তুলে মাটিতে আছাড় দেয় ৷ পা দিয়ে থেঁতলে দেয় এলড্রিজের মাথা ৷ ঘটনাস্থানেই মৃত্যু হয় তাঁর ৷ চোখের সামনে এমন দৃশ্যে ভয়ভীত হয়ে পড়েন সকলে ৷ এই মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে শহরে। বিভিন্ন সংবাদপত্রও এই নিয়ে লেখে ৷ শহরের বাসিন্দারা দাবী তোলে ম্যারির শাস্তির ৷ হাতিটিকে ফাঁসি দিতে চান বাসিন্দারা ৷ ম্যারি একটি অবলা জীব, সে নির্দোষ এই কথা সকলকে বলার চেষ্টা করে চার্লি ৷ কিন্তু কেউ তার কথায় আমল দেয় না। অবশেষে ১৩ই সেপ্টেম্বর ম্যারির একটি ক্রেনে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।

গলায় শিকল জড়িয়ে ৫ টন ওজনের ম্যারিকে একটানে মাটি থেকে প্রায় 20 ফুট উঁচুতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ৷ প্রথম বারে ম্যারিকে ঝোলাতে গিয়ে ছিড়ে যায় শেকল। মাটিতে পড়ে ম্যারি গুরুতর আহত হয় ৷ ভেঙে যায় তার মেরুদণ্ড, পাঁজরের হাড়, কেটে যায় গলার কাছের চামড়া ৷ কিন্তু, তাতেও যেন রাগ কমে না উন্মত্ত জনতার ৷ দ্বিতীয়বার আরও কষে ম্যারির গলায় শেকল বেঁধে ঝোলানো হয় তাকে ৷ ম্যারির মরণ আর্তনাদে কেঁপে যায় চারদিক ৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্য হয় হাতিটির।

এই নৃশংস ঘটনার আজ প্রায় ১০০ বছর পার হয়ে গিয়েছে ৷ তবু যেন অবলা জীবটিকে ওই ভাবে ফাঁসিতে ঝোলানোর অপরাধ যেন ভুলতে পারে না এই শহর ৷ তাদের পূর্ব বাসিন্দাদের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত হিসাবে ম্যারিকে মনে রাখতে তৈরী করা হয়েছে বিশেষ তহবিল ৷ হাতিদের দেখাশুনার ব্যাবস্থাও করা হয়েছে। কিন্তু ১০০ বছরের পরেও এই স্মৃতি যেন আজও ভুলতে পারেননি বিশ্বের মানুষ ৷ পশুপ্রেমীদের কাছে আজও অপরাধী এই শহরের বাসিন্দারা।

Related posts

বিচারক জিজ্ঞাসা করলো কার সঙ্গে থাকবে? বাচ্চা মেয়েটি কার দিকে ইশারা করলো শুনলে অবাক হবেন

News Desk

করোনা পরীক্ষার জন্য তরুণীর যোনি থেকে নমুনা সংগ্ৰহ! মহারাষ্ট্রে ধৃত ল্যাব টেকনিশিয়ান

News Desk

অ্যামাজন ছাড়ছেন, এর পর কী করবেন ধনকুবের জেফ বেজোস? সন্ধান দিল ইনস্টাগ্রাম

News Desk