এ এক অদ্ভূত গ্রামের উপাখ্যান। এই কাহিনী সহজে কারও বিশ্বাস হওয়ার কোনও কারণ নেই। কারণ এই বিস্ময় গ্রামে বছরের পর বছর ধরে যা চলে আসছে, তা সত্যিই একবারে কেউ বোধগম্য করতে পারবেন না। এক আশ্চর্য গ্রাম কেনিয়ার শ্যামবুরু এলাকার অবস্থিত এই উমোজা । উমোজা , যে অদ্ভুত গ্রামে শুধু থাকেন মহিলারাই। ২৭ বছর হয়ে গেল এই গ্রামে নেই কোন পুরুষের প্রবেশ। কারণ মহিলারাই নিজেরা নিয়ম করে এই গ্রামে পুরুষ প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন। কিন্তু নিজেদের মতন করে জীবন ধারণ করছেন প্রতি মহিলা গ্রামে পুরুষ প্রবেশ না থাকা সত্ত্বেও । প্রতিবছরই সন্তানের জন্মও দিচ্ছেন এদের মধ্যে কেউ-না-কেউ। ফলে জগতের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী বংশবৃদ্ধিও হচ্ছে। পরিবর্তিত হচ্ছে সমাজ । কিন্তু আজও কেনিয়ার বিষ্ময় এই অদ্ভুত গ্রাম।
কিন্তু এমন কেন? ১৯৯০ সালে ঘটনাটি ঘটেছিল যখন সেখানে মোতায়েন বৃটিশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ১৫ জন স্থানীয় আদিবাসী মহিলাকে ধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে। কিন্তু উল্টে ধর্ষিত মহিলা দেরই বহিষ্কার করা হয় সমাজ থেকে। সেই সব মহিলারা এই গ্রামে এসে বসতি গড়ে তোলেন। তারপর থেকে এখানে এসে একসঙ্গে বসবাস করতে শুরু করেন নানা সময়ে পুরুষদের হিংসার শিকার হওয়া বিভিন্ন মহিলারা। এক সমাজ গড়ে তুলেছেন অনেকে যাদের মধ্যে কেউ হয়তো ধর্ষণের শিকার, কেউ বাল্যবিবাহের শিকার, কেউ গার্হস্থ্য হিংসার শিকার। তাঁরা সকলেই হাতে হাত ধরে এই গ্রাম বানিয়েছেন। শুধু মহিলাদের যে সমাজ। যেখানে কোনরকম প্রবেশাধিকার নেই পুরুষদের।
বর্তমানে প্রায় আড়াইশো মহিলা বসবাস করেন এই গ্রামে। তাহলে এখানে প্রশ্ন ওঠে যে কী করে সন্তানের জন্ম দেন এই গ্রামের মহিলারা ? তার উত্তরেও নারী স্বাধীনতার আসল প্রশ্নটি আছে । নিজের সঙ্গীকে বেছে নেওয়ার প্রশ্ন। গ্রাম থেকে বেরিয়ে এই গ্রামের মহিলারা নিজের পছন্দের পুরুষটিকে খুঁজে নেন এবং সেই পছন্দের পুরুষের সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হন। তারপর তাঁরা গর্ভধারণ করেন এবং জন্ম দিয়ে থাকেন সন্তানের । এখানে কোনওরকম আড়ষ্টতা নেই কোনো সম্পর্ক, বিবাহ, সম্পর্কের । এই গ্রামের মহিলারা পুরুষ সঙ্গীকে বেছে নেন কেবল সন্তান উৎপাদনের জন্য এবং যৌনসুখের জন্য। প্রাইমারি স্কুল রয়েছে এই গ্রামে । সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া দর্শনীয় স্থান রয়েছে একাধিক এই গ্রামে। পর্যটকেরা সেগুলি দেখতে আসেন । সেই পর্যটকদের অর্থের ওপর নির্ভর করেই এই গ্রাম দাড়িয়ে রয়েছে। যে টিকিট কেটে পর্যটকরা এই গ্রামে ঢোকেন এবং গ্রামের বিভিন্ন অংশ পর্যবেক্ষণ করেন, দেখেন, ইতিহাস জানেন, সেই পর্যটকদের কাটা টিকিটের দাম থেকেই এই গ্রামের নারীদের হাতে অর্থ আসে। কিন্তু এ যেন নারীবাদের আদর্শ উদাহরণ এক পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কাছে। তাঁদের কামনা বাসনা ইচ্ছা সেটি একমাত্র প্রাধান্যের বিষয়।