দশভূজা দুর্গা। দশহাতে নানা অস্ত্রে সজ্জিত দেবী। তাই দেবীর আরাধনা হয় বাংলার বুকে দশভূজা রূপেই। কিন্তু জানেন কি এই দুর্গা পুজোয় প্রতিমার থাকে চারটি মাত্র হাত। এই পুজো আজকের পুজো নয়। গত ৩৬৩ বছর ধরে বর্ধমানের কালনা শহরের কুলটি গ্রামের চৌধুরী পরিবারের দুর্গা পুজো হয়ে আসছে এমন ভাবেই। সাড়ে তিনশ বছরেরও পূর্বে এই পরিবারে শুরু হয়েছিল দেবী অর্চনা (Durga puja started 363 years back)। তবে বদলেছে সময় ,বদলেছে দিন কাল, বদলেছে চার পাশের পুজোর ধরন। এখন বারোয়ারী পুজোর রমরমা। কিন্তু নিজেদের চলে আসা রীতি-রেওয়াজে আজও কোনো রকম খামতি আসতে দেয়নি এই চৌধুরী পরিবার। এখনও প্রাচীন রীতি মেনে চার হাতের প্রতিমার মাধ্যমেই মা দুর্গাকে পুজো করা হয়।
সামনেই আসছে পুজো। ইতিমধ্যেই আগামী পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে এই পরিবারে। পুজোর আসল শুরু হবে মহালয়া থেকে। প্রতিপদে বসানো হবে দেবীর ঘট। ওই দিন চৌধুরী পরিবারে শুরু হবে পুজো। সেইদিনের পুজো দেখতে আশেপাশের বহু অঞ্চল থেকে লোক ভিড় করেন প্রতিবছর। তবে কেন এখানে দেবী প্রতিমার চার হাত। জানা যায়, পুজোর শুরুর দিকে দেবী দশভুজা রূপেই পূজিত হতেন। তবে কোনো একবার একটি ভয়ানক অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে। সেই দুর্ঘটনায় মায়ের ছটি হাত পুরোপুরি পুড়ে যায়। মায়ের থেকে যায় চার হাত। সেই থেকেই দেবী প্রতিমা কে চতুর্ভুজা রূপেই পুজো করেন চৌধুরী পরিবার।
প্রাচীন রীতি যে শুধু চার হাতের প্রতিমাতেই সীমাবদ্ধ তা নয়, আজও দুর্গা উৎসব হয় প্রাচীন মাটির দালানেই। যদিও সেই মাটির দালান একাধিকবার সংস্কারের ভাবনা চিন্তা করা হলেও প্রতিবারই কোনও না কোনও স্বপ্নাদেশের কারণে তা মাটির দালানই রেখে দেওয়া হয়েছে। বাড়ির এক সদস্য জানালেন, ‘আগে খুব জাঁকজমক সহ বন্দুকে শেল ফাটিয়ে বলি দেওয়া হত। তবে এখন কেবল আঁখ আর কুমড়ো বলি দেওয়া হয়’।
চৌধুরী পরিবারের আরেক সদস্য প্রকাশ চন্দ্র আঢ্য বলেন,’ পুজোর চার দিন পরিবারের সকল সদস্য আত্মীয় পরিজন মিলে প্রায় ১০০ জন বসে খাওয়া দাওয়া হয়। আগে পুজোর আসর মাতিয়ে রাখত কবির লড়াই। কিন্তু এখন সেসব অতীত। তাই বাউল সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে চৌধুরী বাড়িতে পুজোর সময়। তবে করোনা আবহে সেই অনুষ্ঠানে বন্ধ ছিল আগের বছর। এবং করোনা সমস্যা থাকায় এই বছরও তা হবে না। তবে বিসর্জনের দিন পরিবারের প্রত্যেক সদস্য মিলে আজও আগেকার মতন গান গেয়ে প্রতিমা নিরঞ্জন করে ফিরি।