উত্তর পশ্চিম উপকূলের রাজ্য ত্রিবাঙ্কুর। জাতিভেদ প্রথার খুব কড়াকড়ি। হিন্দু নিম্নবর্গীয়রা ব্রাহ্মণদের ধারে কাছে ঘেঁষতে পারেন না। তথাকথিত নীচুজাত হিসেবে পরিচিত নাদার জাতির মেয়েদের ছিল না ঊর্ধাঙ্গে কোনও পোশাক পরার অধিকার। কখনও কখনও কাঁধে উত্তরীয় গোছের হালকা একটা কাপড় রাখতেন তাঁরা। সেই দিয়ে বুক ঢাকলেও, রাস্তায় উচ্চবর্ণের কোনও পুরুষের সঙ্গে দেখা হলে, তাঁদের সম্মান দেখানোর জন্য বুকের কাপড় সরিয়ে ফেলার জঘন্য এবং ঘৃণ্য প্রথা চালু ছিল। যারা বুক ঢাকতে চাইতেন তাঁদের দিতে হত, ‘মুলাকরম’ বা ‘ব্রেস্ট ট্যাক্স’। এমন অসভ্য প্রথার কথা আমাদের পক্ষে এখন কল্পনা করা মুশকিল হলেও এই ছিল আদত বাস্তব-চিত্র। এলাকায় নিযুক্ত জমিদারের লোক ‘ভিলেজ অফিসার’ বা ‘প্রভাথিয়ার’ এসে স্তনের আকার বা ওজন দেখে কার কত ‘মুলাকরম’ বা ‘ব্রেস্ট ট্যাক্স’ দেওয়া উচিত, তা নির্ধারণ করতেন। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন এক অসমসাহসী রমণী।
নাম তাঁর নাঙ্গেলি, থাকতেন চেরথালা নামের এক গ্রামে। তিনি ছিলেন এজহাভা সম্প্রদায়ের মানুষ। স্বামী চিরুকান্দান এর সঙ্গে বেশ সুখেই ঘরকন্না করছিলেন। স্বামী চাষাবাদের কাজ করতেন, নাঙ্গেলি ঘর সামলাতেন।
একদিন নদী থেকে জল আনার সময়ে গ্রামের মোড়ল পথ আটকে দাঁড়ায় নাঙ্গেলি এবং তাঁর সখীর। নাঙ্গেলি সঙ্গে থাকা কাপড়ের টুকরো দিয়ে নিজের বুকদুটি ঢেকে নিয়েছিলেন। বুকের কাপড় খুলে তাঁকে দেওয়া হয় যথাবিহিত সম্মান দেখানোর ফরমান। নাঙ্গেলি নারাজ। লোকটির কামলোলুপ দৃষ্টি তার চোখ এড়ায়নি।
দিন কয়েক কাটে। একদিন, ঢাক ঢোল পিটিয়ে লোকটি বড়কর্তা সমেত হাজির হল নাঙ্গেলির সুখী গৃহকোণের ছোট্ট উঠোনে। নাঙ্গেলি বড়কর্তার সামনেও এল বুক ঢেকে। বড়কত্তার নির্দেশেও কাপড় সরাননি নাঙ্গেলি। অটুট থাকলেন তাঁর সিদ্ধান্তে।