সংগীত তার কাছে ঈশ্বরের উপাসনার মতই। সুর আর গান নিয়ে বসলেই যেন তার মন চলে যায় ভাবের আবেশে। আর তখন সৃষ্টি হয় সুরের অন্যরকম এক দূত্যনা। তার নাম এ আর রহমান (A.R Rahman) বা আল্লাহ রাখা রহমান। ভারতবর্ষ – এর সংগীত অহংকার তিনি।
কিন্তু তাও তাঁর জীবন নিয়ে একটি বড় প্রশ্ন আজও মানুষের মনে ঘোরাফেরা করে। কিভাবে হিন্দু যুবক দিলীপ হয়ে উঠলেন মুসলিম আল্লাহ রাখা। কেন নিজের নাম বদলালেন তিনি? নিজের ধর্মই বা কেন পরিবর্তন করলেন?
রহমানের জীবনীকে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরেছেন নসরিন মুন্নি। ১৯৬৭ সালের ৬ জানুয়ারি এ আর রহমান জন্মেছিলেন এ এস দিলীপ কুমার নাম নিয়ে। তার বাবা ছিলেন এক তামিল সঙ্গীত পরিচালক আর কে শেখর এবং মা গৃহবধূ কস্তুরী দেবী। রহমানের বাবা দক্ষিণী বেশ নামী সঙ্গীত পরিচালকই ছিলেন। কিন্তু নিজের পিতার কাছ থেকে সঙ্গীত শিক্ষা নেয়ার খুব বেশি সুযোগ পাননি। কারণ, ১৯৭৬ সালে মাত্র নয় বছর বয়সে তার বাবা মারা যায়।
দিলীপের ছেলেবেলা ছিল খুব দারিদ্রতা আর কষ্টের। বাবার আচমকা মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে যায় তাঁদের জীবন। পিতা শেখর তার পরিবার পৃথিবীতে রেখে যান যার মধ্যে ছিলেন তার স্ত্রী কস্তুরী (বর্তমানে করিমা বেগম) এবং তিন কন্যা ও এক পুত্র। এই তিন বোন ও মায়ের সব দায়িত্ব এসে পড়ে ছোট্ট দিলীপের ওপর। ১১ বছর বয়সেই সে গানের জগতে প্রবেশ করে কিবোর্ড প্লেয়ার হিসাবে।
গানের জগতে মন দিতে গিয়ে দিলীপের স্কুলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। যদিও তিনি পরবর্তীতে নামকরা দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পদ্ম শেষাদ্রি বাল ভবন এবং মাদ্রাজ ক্রিশ্চিয়ান কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নিজের গানের চর্চায় মন দেন। ওয়ার্ল্ড ট্যুরে যাওয়ার পর তার প্রতিভায় আকৃষ্ট হয়ে তাকে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ট্রিনিটি কলেজ অব মিউজিকে পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দেন। ফিরে এসে তিনি সুফি সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। তার প্রথম যে মিউজিক অ্যালবামটি তিনি তামিল সুফি সঙ্গীতের উপর প্রকাশ করেন এর নাম ছিল দিন ইসাই মালাই
১৯৮৮ সালে ওই অ্যালবাম প্রকাশ করার সময় অর্থাৎ দিলীপের বয়স যখন একুশ তখন তার এক বোন গুরুতর ভাবে অসুস্থ হয়। চিকিৎসাতেই সেই ভাবে উপকার হচ্ছিল না। সেই সময় তাদের সাথে পরিচয় হয় শেখ আবদুল কাদের জিলানি নামে এক মুসলিম পীরের কাছে। সেই পীরের বেশ কিছু বাণী ধীরে ধীরে করিমা ও রহমানের আধ্যাত্মিকতা আর ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন আনে। সুফি চিন্তা ধরার প্রভাব পড়ে তাদের ওপর। কিন্তু করিমুল্লাহ শাহ কোনোদিনই তাদের ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার বা ধর্মান্তরকরণের কথা বলেননি।
ধর্ম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত তারা নিজেরাই নেন। তার আগে নিজের নাম পরিবর্তন করেন এ আর রহমান। জ্যোতিষির কাছে পরামর্শ নিলে তাকে দুটি নামের কথা বলেন- আব্দুর রহমান ও আব্দুর রহিম। অবশেষে তার মা ‘আল্লাহ্ রাখা’ নামটি রাখেন। আর সঙ্গে রহমান। আল্লাহ্ রাখা শব্দের অর্থ, ঈশ্বর যাকে রক্ষা করেন। এভাবেই এ এস দিলীপ কুমার থেকে তিনি হয়ে ওঠেন আজকের আবদুল রহমান ওরফে আল্লা রাখা রহমান ওরফে এ আর রহমানের।
এ আর রহমান এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ‘‘সুফি আমাকে শিখিয়েছিল, যে ভাবে সূর্যের তাপ বা বৃষ্টি কখনও মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ করে না তেমনই মানুষেরও কখনো উচিৎ নয় একে অপরের মধ্যে ভেদাভেদ করা উচিত না। তা সে যে ধর্ম বর্ণই হোক না কেন। ’’