প্রয়াত হলেন দালাল স্ট্রিটের রাজা রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা। এককথায় এদেশের স্টক মার্কেটের রাজা ছিলেন তিনিই। বেশ কদিন হল তাঁর এয়ারলাইন্স আকাশা এয়ারলাইন্সও এ দেশে পরিষেবা শুরু করেছে। রবিবার দিন ভোর বেলায় তার মৃত্যু হয়। ৬২ বছর বয়স হয়েছিল তার মৃত্যুর সময়। জানা গিয়েছে, তাঁকে মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় এদিন ভোর ৬টা ৪৫ মিনিট নাগাদ। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এখনো পর্যন্ত কোনও সঠিক কারণ জানা যায়নি তার মৃত্যুর। কিছু জানানো হয়নি পরিবারের তরফেও। যদিও তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন গতমাসেই। হাসপাতাল থেকে মাত্র সপ্তাহ দুই আগেই তাকে ছাড়া হয়েছে।
অবশ্য হাসপাতাল এবং পরিবার থেকে মৃত্যুর কোনও সঠিক কারণ এখনও জানানো হয়নি, বেশ অনেকদিন ধরেই ভুগছিলেন রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা। অনেক রকম শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। কয়েকদিন আগে তাঁকে হুইলচেয়ারে বসে থাকতেই দেখা গিয়েছিল আকাশা এয়ারলাইন্সের উদ্বোধনের সময়। সূত্রের খবর, দেশের অন্যতম ধনকুবেরের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে।
১৯৮৫ সালে মাত্র ৫০০০ টাকা হাতে নিয়ে শেয়ার মার্কেটে প্রবেশ করেছিলেন রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা। নিজেই তৈরি করে নিয়েছিলেন অগ্রগতির রাস্তা সেখান থেকে। তিনি বিনিয়োগ করেছিলেন একাধিক শিল্প ও বাণিজ্যে। সম্প্রতিই ফোর্বস ম্যাগাজিন প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার বর্তমানে সম্পত্তির পরিমাণ আনুমানিক সাড়ে ৫০০ কোটি ডলার, যা ৪২ হাজার কোটি টাকারও বেশি ভারতীয় মুদ্রায়।
‘বিল বুল’ হিসাবেই শেয়ার বাজারে পরিচিত ছিলেন রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা। যেই শেয়ারই কিনতেন, সোনা তাতে ফলত। তিনি একটি সংস্থার শেয়ার সম্প্রতিই কিনেছিলেন। এরপরই সেই সংস্থার শেয়ার তরতরিয়ে ওঠে। প্রায় ২০০ কোটিরও বেশি লাভ করেছিলেন তিনি একদিনেই। তিনি বিনিয়োগকারী ছাড়াও অ্যাপটেক লিমিটেড ও হাঙ্গামা ডিজিটাল মিডিয়া এন্টারটেইনমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি একাধিক সংস্থার ডিরেক্টরও ছিলেন। সম্প্রতিই তাঁর স্বপ্নের এয়ারলাইন্স আকাশা এয়ার উড়ান শুরু করে।
একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯৬০ সালের ৫ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা। অল্প বয়স থেকেই বড় ব্যক্তিত্ব হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কলেজে থাকাকালীনই তিনি সেই কারণে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ শুরু করেন। দালাল স্ট্রিটে পা রেখেছিলেন তিনি, তার বাবার কথা শুনে ও তাঁর থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই, এমনটা নিজেই এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন। প্রথম লাভের মুখ দেখেন তিনি শেয়ার বাজারে ১৯৮৬ সালে, মাত্র ৪৩ টাকা দিয়ে টাটা টি-র ৫ হাজার শেয়ার কিনেছিলেন। সেই শেয়ারের দাম তিন মাসের মধ্যেই ১৪৩ টাকায় পৌঁছেছিল। রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা বিনিয়োগের তুলনায় তিনগুণ লাভ করার পরই বুঝে গিয়েছিলেন, নিজের হাতের মুঠোয় শেয়ার বাজারকে আনতেই হবে। তিনি শেয়ার বাজার থেকে পরবর্তী তিন বছরে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা আয় করেন। এভাবেই রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা হাজারের সম্পত্তি লাখে এবং লাখের সম্পত্তি কোটিতে পরিণত করেন।