জ্ঞান অর্জনের সবচেয়ে সহজ রাস্তা হল বই পড়া। এই প্রসঙ্গে সাহিত্যিক লিও তলস্তয়ের একটি উক্তি বিশেষ ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছেন ‘মানুষের জীবনে সবচেয়ে বিশেষ ভাবে প্রয়োজন তিনটি জিনিস, বই, বই এবং বই’। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যখন মান্দালয়ের কারাগারে বন্দি ছিলেন, তখন বই কী ভাবে তাঁকে তার নিঃসঙ্গতা কাটাতে সাহায্য করেছিল, তা তিনি ‘তরুণের স্বপ্ন’ বইটিতে খুব সুন্দর ভাবে ব্যক্ত করেছেন।
কিন্তু জানেন কি এই পৃথিবীতে রয়েছে এমন কারাগার যেখানে নিঃসঙ্গতা দূর করতে নয়, কারাবন্দীরা বই পড়ে নিজেদের সাজার দিন কম করতে। দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলে রয়েছে এমনই কয়েকটি কারাগার। সেখানকার ‘কাসা দে কাস্তোদিয়া দে পিরাকোয়ারা’ কারাগার এবং আরও তিনটি ‘ফেডারাল প্রিসন’-এ সাজাপ্রাপ্তবন্দীরা বই পড়লেই কমে যায় শাস্তি।
ব্রাজিল তার জনাকীর্ণ কারাগার ব্যবস্থায় বন্দীদের তাদের প্রাপ্ত সাজার দিন সংক্ষিপ্ত করার উদ্দেশে এই অভিনব উপায় অফার করে। প্রত্যেকটি বই পড়ার জন্যে তাদের সাজার দিন থেকে ৪ দিন করে কম করা হয়।এভাবেই ব্রাজিলের ৪টি ফেডারেল কারাগারে বন্দী কিছু কুখ্যাত অপরাধীরা তাদের সাজার দিনের থেকে প্রতিবছর সর্বোচ্চ ৪৮ দিন কম করতে পারেন। প্রতি বছর এই জন্যে তাদের অন্তত ১২টি বই পড়তে হবে। সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান বা ক্লাসিক্যাল যে বিষয় বাছতে পারেন কারাগারে বন্দীরা। প্রতিটি বই পড়ার জন্য বন্দীদের সর্বোচ্চ সময় দেওয়া হয় ১ মাস।
এর পরে সেই পাঠক বন্দী কে যে বই পড়েছেন তার তার মূল বিষয়, চরিত্র ইত্যাদি নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখে জমা দিতে হবে। এই প্রবন্ধের উপর নির্ভর করে নেওয়া হয় পরীক্ষাও। সেই পরীক্ষার ফলাফলের উপরই নির্ভর করে কতোটা সাজা মকুব হবে তার পরিমাণ।
ব্রাজিলে অভিনব এই উদ্যোগটি চালু করা হয় সেই দেশের সরকারের দ্বারা ২০১২ সালে। যার নাম দেওয়া হয় ‘রিডেম্পশন থ্রু রিডিং।
কারাগারের বন্দীদের জন্যে বইয়ের অনুদান দিয়েছেন এমন এক সাও পাওলোর আইনজীবী আন্দ্রে কেহদি বলেছিলেন, “এই বই পড়ার কর্মসূচির ফলে একজন ব্যক্তি যখন কারাগার থেকে বেরোবে সাথে করে নিয়ে যাবে অনেক জ্ঞানের আলো ও বিশ্বকে প্রসারিত দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখার ক্ষমতা।”
তিনি আরও বলেন, “নিঃসন্দেহে তারা অনেক ভাল এক ব্যাক্তিত্ব রূপে কারাগার থেকে বেরোবে।”