পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে এমন অন্তত ১০ জন চাকরি পেয়েছেন। আর তাদের প্রত্যেকেরই চাকরি হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষক পদে। আর চাঞ্চল্যকর বিষয় হচ্ছে সেই পরিবারেরই একজন পুলিশ কর্মী যিনি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দেহরক্ষী বিশ্বম্ভর মণ্ডল। এইভাবে একই পরিবারের দশজনের প্রাথমিক শিক্ষক পদে চাকরি পাওয়া কি স্বচ্ছ নিয়োগ, এই নাম তালিকা জমা পরল হাইকোর্টের হলফনামায়। একসাথে একই পরিবারের এতজনের প্রাথমিক শিক্ষক হিসাবে চাকরি পাওয়া কি স্বাভাবিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায়? চাকরিপ্রার্থীদের পক্ষের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত শুক্রবার এই বিষয়ে হলফনামা জমা দিয়েছেন। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এই মামলার শুনানি হতে পারে।
প্রাথমিক শিক্ষক পদের এক চাকরিপ্রার্থী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ এনে হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় ইতিমধ্যেই সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সেই নির্দেশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল। সেখানে শুনানি সমাপ্ত হলেও রায় এখনও ঘোষণা হয়নি। ডিভিশন বেঞ্চ নিজেদের রায় কোন স্থগিতাদেশ না-দেওয়ায় এই মামলাটি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসেও চলছে। সেই প্রাথমিক শিক্ষক পদের মামলার শুনানি চলাকালীনই শুক্রবার ওই ১০ জনের নামের নথি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এজলাসে জমা দেন সুদীপ্ত দাশগুপ্ত। গতকালই পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তারের পর তার দেহরক্ষীর পরিবারের এতজনের চাকরি পাওয়ার বিষয়টির মামলা আরো গুরুতর হয়ে উঠতে পারে।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী যখন ছিলেন তখনই তার নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে নিযুক্ত বিশ্বম্ভরের স্ত্রী রিনা, দুই ভাই বংশীলাল ও দেবগোপাল প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন অভিযোগ। শুধু এই তিনজনই নয়, ওই পরিবারের আরো অনেকের নাম রয়েছে এই তালিকায়। যেমন বিশ্বম্ভরের মাসতুতো ভাই পূর্ণ মণ্ডল, মাসতুতো বোন গায়ত্রী মণ্ডল, মেসোমশাই ভীষ্মদেব মণ্ডল, মাসতুতো জামাই সোমনাথ পণ্ডিত, শালা অরূপ ভৌমিক, শ্যালিকা অঞ্জনা মণ্ডল, প্রতিবেশী অমলেশ রায়েরও।
যদিও প্রাথমিক শিক্ষকের পদে চাকরি পাওয়া বংশীলালের দাবি, ‘‘দাদার সাথে যোগাযোগ কম। মাকে দেখতে কখনো কখনো এখানে আসেন।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘আমি ২০১২ সালের ‘টেট’ পরীক্ষার্থী ছিলাম। আদালতের নির্দেশে অনুযায়ী আমার নিয়োগ হয়েছে। আর আমাদের চাকরি যখন হয়েছে তখন দাদা পার্থবাবুর নিরাপত্তারক্ষীও ছিলেন না। এসবই রাজনৈতিক প্রতিহিংসাব।’’ কিন্তু তাও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, একই পরিবারের এত জনের চাকরি পাওয়া কি পুরোটাই সচ্ছভাবে? যদিও বংশীলালের উত্তর, ‘‘যোগ্যতা আছে বলেই চাকরি পেয়েছি। আইনি পথে লড়ব। আদালতেই সব প্রমাণ দেব।’’
তথ্য সূত্র: আনন্দবাজার