মোবাইল গেম কেড়ে নিল তরতাজা প্রাণ! অনলাইনে গেমের নেশায় আসক্ত এক ২১ বছরের যুবকের মৃত্যু ঘিরে ধন্দ। রবিবার সকালে হুগলি জেলার গোঘাটের ধুলেপুর গ্রামে এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এদিন সকালে শুভদীপকে তাঁর নিজের ঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম শুভদীপ ঘোষাল। কলেজ পড়ুয়া ওই ছাত্রের বাড়ি গোঘাটের ধুলেপুর গ্রামে। আরামবাগ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
দরিদ্র কৃষক পরিবারের ছেলে শুভদীপ হঠাৎ করে কেন আত্মঘাতী হলেন তা স্পষ্ট নয়। তবে মোবাইল গেমে তাঁর প্রচণ্ড আসক্তি ছিল বলে জানাচ্ছে পরিবার। তার জেরেই শুভদীপ আত্মঘাতী হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করছে পাড়া-পড়শি।
শুভদীপের পারিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শুভদীপ মোবাইল গেমে প্রচণ্ড আসক্ত ছিলেন। আগে বাড়িতে কারোর অ্যান্ড্রয়েড ফোন না থাকায় প্রতিবেশী, বন্ধুদের ফোন নিয়ে গেম খেলতেন তিনি। অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনে দেওয়ার জন্য বাবাকেও চাপ দিতেন। শুভদীপের বাবা দরিদ্র কৃষক। বাবা, মা ছাড়া তাঁর এক ভাই ও এক বোন রয়েছে। অপরের জমিতে কৃষিকাজ করে যা উপার্জন হয়, তা দিয়ে পরিবারের এতগুলো সদস্যের পেট চালাতেই হিমশিম হতেন শুভদীপের বাবা। ফলে ছেলেকে অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনে দেওয়া তাঁর সাধ্যের বাইরে। তবু বছর দুয়েক আগে তিনি ছেলেকে কথা দিয়েছিলেন, শুভদীপকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলে যেভাবেই হোক একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল কিনে দেবেন। পড়াশোনায় মেধাবী শুভজিতও কেবল উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেননি, ভাল ফলও করেছিলেন। এরপর শুভদীপের বাবাও ছেলেকে দেওয়া তাঁর কথা রাখেন। একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনে দেন। কিন্তু কে জানত এই মোবাইল তার জীবনের সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে দাঁড়াবে!
নিজে মোবাইল ফোনের মালিক হয়ে গেমে বুঁদ হয়ে পড়েন শুভদীপ। মোবাইল কেনার কিছুদিন পরেই তিনি বেশ কিছু গেমস ডাউনলোড করেছিলেন। তারপর দিন-রাত গেমে মগ্ন থাকতেন। প্রতিবেশীরা জানান, শুভদীপ বাড়ি থেকে একেবারে বের হতেন না। এরপর শুরু হয় বাড়িতে টাকা চাওয়া। গেমের জন্যই টাকা চাইতেন তিনি। এই নিয়ে বাড়িতে অশান্তি শুরু হয়। বাড়ির কারোর সঙ্গেই খুব একটা কথা বলতেন না শুভ। রাত জেগেও গেম খেলতেন। তাই বাড়ির লোকের অনুমান, এই সর্বনাশা গেমের আসক্তির জেরেই মানসিক অবসাদে শুভদীপ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। এদিন সকালে শুভদীপের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।