গাজিয়াবাদ পুলিশের সাইবার সেল এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে যে ডেটিং অ্যাপে জাল আইডি তৈরি করে মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব করার পরে অশ্লীল চ্যাটিং করার মাধ্যমে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করত। অভিযুক্তর কাছ থেকে দুটি মোবাইল, দুটি এটিএম কার্ড এবং এক ডজন সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত যুবক এমবিএ পাস। তিনি আইটি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পরিচয় দিয়ে তরুণীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতেন এবং তাদের মর্ফড অর্থাৎ অশ্লীল ছবি বানিয়ে ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে অভিযুক্ত এখন পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব এবং দিল্লির বিভিন্ন মেয়েদের নিজের শিকার বানিয়ে তাদের কাছ থেকে প্রায় এক কোটি টাকা আদায় করার কথা স্বীকার করেছে।
সাইবার সেলের নোডাল অফিসার এবং সিও ইন্দিরাপুরম অভয় কুমার মিশ্র জানিয়েছেন যে রাজনগর এক্সটেনশনের একটি সোসাইটিতে বসবাসকারী এক তরুণী নন্দগ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিল। তিনি তার অভিযোগে জানান যে কিউপিড নামের একটি ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে তার সাথে ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ সাল-এ বৈভব অরোরা নামে এক যুবকের পরিচয় হয়েছিল।
বৈভব নিজেকে একজন আইটি ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। এর পর ইন্সটাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাটিং শুরু হয় তাঁর সঙ্গে। মেয়েটির অভিযোগ, বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে তার কাছ থেকে ছবি চেয়ে নেন বৈভব। এরপর এসব ছবি এডিট করে অশ্লীল বানিয়ে ভাইরাল করার হুমকি আসতে থাকে বৈভবের। তা না করার জন্য বৈভব টাকা চাইতে শুরু করে। মেয়েটি বলে যে Paytm এবং Google Pay এর মাধ্যমে 24 লক্ষ টাকা নেওয়া সত্ত্বেও, যখন ব্ল্যাকমেলিং চলতে থাকে তখন তিনি সাহায্যের জন্য পুলিশের কাছে আসেন।
সাইবার সেল অফিসার বলেন, মামলা নথিভুক্ত হওয়ার পর সাইবার সেল বিষয়টি তদন্ত করছিল। তদন্তে অভিযুক্তকে খুঁজে বের করে গ্রেফতার করা হয়। অভিযুক্তের নাম আনন্দপাল, যিনি বিজয়নগর থানা এলাকার মির্জাপুরমের বাসিন্দা।
অফিসার বলেন, উত্তরপ্রদেশ ছাড়াও পাঞ্জাব ও দিল্লির অনেক মেয়েকে প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেল করেছে আনন্দপাল। সম্প্রতি তিনি তিন তরুণীকে হেনস্থার শিকার করেছেন। রাজনগর এক্সটেনশনের বাসিন্দা ওই মেয়ের কাছ থেকে ২৪ লক্ষ টাকা আদায় করা ছাড়াও, তিনি পাঞ্জাবের এক মেয়ের কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা এবং দিল্লির এক মেয়ের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করেছেন। আনন্দপালের মোবাইলে পাঁচ শতাধিক মেয়ের সঙ্গে চ্যাট করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর পাশাপাশি অশ্লীল নানা ছবিসহ শতাধিক মেয়ের ছবিও পাওয়া গেছে।
সাইবার সেলের ইনচার্জ জানান, ডেটিং ও ফ্রেন্ডশিপ অ্যাপে বন্ধুত্ব করার পর সে মেয়েদের ব্ল্যাকমেইল করার পাশাপাশি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলও করত। বিয়ের অজুহাতে বিশ্বাস অর্জন করে দুর্ঘটনা, অসুস্থতা বা অন্যান্য অজুহাতে মেয়েদের প্রতারণা করত। কিছু মেয়ে তার ফাঁদে পা দিয়ে টাকা ট্রান্সফার করত, আবার কেউ তার উদ্দেশ্য টের পেয়ে তার সাথে সম্পর্ক শেষ করে দিত।
সাইবার সেলের ইনচার্জ সুমিত কুমার জানান, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করার পর আনন্দপাল স্টার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট নামে নিজের ফার্ম তৈরি করেছিলেন, কিন্তু করোনার সময় তার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আর্থিক জোগান বন্ধ হওয়ার কারণে সে বন্ধুত্ব করে মেয়েদের প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইল করার ব্যবসা শুরু করে। এর জন্য সে বিভিন্ন ডেটিং অ্যাপে তার ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে এবং আইটি ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ভান করে মেয়েদের ফাঁদে ফেলতে থাকে। এ জন্য আনন্দপাল তার প্রোফাইলে মডেল যুবকদের ছবি রাখতেন।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের আইডি নিয়ে তাদের নামে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। এসব অ্যাকাউন্টে ব্ল্যাকমেইলের টাকা ট্রান্সফার করাতেন। এ ছাড়া মেয়েদের সাথে চ্যাট করতে ও কথা বলতে ভুয়া আইডির সিম ব্যবহার করতেন। সাইবার সেলের ইনচার্জ জানান, ছয় মাসের মধ্যে অভিযুক্তর একটি অ্যাকাউন্টে ৬০ লাখ টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। অভিযুক্ত এক কোটি টাকার বেশি টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।