মিম হোক কি ফেসবুকের পেজে কটাক্ষ সবেতেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলা চপ শিল্প নিয়ে নানা হাসি-ঠাট্টা চলে। কিন্তু বিষয়টিকে মোটেই হাসি-ঠাট্টার ছলে দেখেননি পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের বাসিন্দা এই যুবক। বেকারত্বের দৈন্য দশা থেকে মুক্তি পেতে চপ শিল্প কেই হাতিয়ার করেছেন ইনি। চপ শিল্প বলা হচ্ছে এর কারণ ঠেলাগাড়িতে তার দোকানের নাম তিনি রেখেছেন ‘চপ শিল্প’। চপ ভেজেই প্রতিদিন ৫০০ টাকা হাতে । সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি চপ তেলেভাজা ভেজে প্রতিদিন বেশ ভালো টাকার রোজগার বিশ্বজিৎ কর মোদকের। খবর সংবাদ প্রতিদিনের।
কিছুদিন আগেই সারা বাংলার নজর কাড়ে ‘এমএ ইংলিশ চায়েওয়ালি’র খবর। স্নাতকোত্তর হয়েও চা এর দোকান দিয়ে চাঞ্চল্য ফেলে দেন হাবড়ার টুকটুকি দাস। প্রকাশ্যে আসার পর তৃণমূল বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক তাঁকে সাহায্যের আশ্বাসও দেন। এবার কিছুটা এমনই ঘটনার শিকার পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের ভিলেজ রিসোর্স পার্সেন বিশ্বজিৎ কর মোদক। জঙ্গলমহল বান্দোয়ান গ্রাম পঞ্চায়েত অঞ্চলে তিনি ভিলেজ রিসোর্স পার্সেন হিসাবে নানা পতঙ্গ বাহিত রোগ দমন করার দায়িত্বে আছেন এলাকায়। আর পাশাপাশি বীজের চপের দোকান দিয়ে বাড়তি কিছু রোজগার করছেন।
বান্দোয়ান ফরেস্ট অফিস মোড়ে এই ঠেলা গাড়ির দোকানের ব্যানারে মোটা হরফে লেখা ‘চপ শিল্প’ বিশেষভাবে নজর কাড়ে দোকানটির বিষয়ে। খুব বেশি দিন নয় দিন পনেরোর মধ্যেই চপ তেলেভাজার পসার জমিয়ে নিয়েছেন বিশ্বজিৎ। কিন্তু তার অর্থাভাব আগে ছিল চরমে।
স্নাতকোত্তর, টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বিশ্বজিৎ। ২০১৬ সাল থেকে জঙ্গলমহল ভিলেজ রিসোর্স পার্সেন হিসাবে নিযুক্ত তিনি। সেই সময় ১৩ দিনের এই কাজ করলে ৪৮০ টাকা পেতেন। ২০১৭ থেকে ২০১৮ অবধি এই কাজ বন্ধ ছিল। তারপর প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভিলেজ রিসোর্স পার্সেনদের পতঙ্গ বাহিত রোগ দমনের কাজে যোগ দেন। প্রতিদিনের বেতন বেড়ে হয় দেড়শো টাকা। ২০২০ সাল নাগাদ বেতন আরও ২৫ টাকা বেড়ে যায়। এখন প্রতিদিন ১৭৫ টাকার গড়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা ভাতা পান বিশ্বজিৎ।
কিন্তু গত জুন মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মাসিক ভাতা না মেলায় সমস্যায় পড়েন তিনি। বিয়ে করে সংসার না চালাতে পেরে ঠোঙা বানিয়ে সারা দিনে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা রোজগার করতেন। সংসারে টাকা পয়সা না দিতে পেরে শেষ অবধি চপের দোকান দিয়েই সাফল্যের মুখ দেখেন তিনি।