দেবীর হাতেই দেবীর আরাধনা। কলকাতার এত বছরের দুর্গাপুজোর ইতিহাসে এই প্রথমবার। কোনো দূর্গা পূজার সম্পূর্ন দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন মহিলা পুরোহিতরা।
ব্রাহ্মণ পুরুষই দেব পুজোর অধিকার সম্পন্ন এই চিরাচরিত প্রথার বাইরে ভাবতে শিখিয়েছিলেন নন্দিনী ভৌমিক, রোহিনী ধর্মপালরা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ভাবনায় জোর আঘাত হেনেছিলেন। নতুন যুগের পথ দেখিয়েছিলেন তাঁরা এবং সম্পূর্ন রূপে হিন্দু শাস্ত্র মেনেই। পুরোহিতের বেশে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে আগামীর কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তাঁরা। এবার কলকাতার এক বারোয়ারী দুর্গাপুজোও (Durga Puja) বাস্তবের দেবী নারীদেরই জয়গান গাইবে। মণ্ডপে দেবীর আসনে পুজিত হবেন মা দুর্গা। আর পুরোহিতের আসনে পুজোর দায়িত্ব নেবেন চারজন মহিলা। এককথায় এই পুজোর হাত ধরে ইতিহাসের সাক্ষী হতে চলেছেন শহরবাসী।
দুর্গা পুজোর খুঁটিপুজো থেকে দেবীর বোধন, অঞ্জলী, সন্ধিপূজা তথা বিসর্জন, অর্থাৎ পুজোর শুরু থেকে শেষ সম্পূর্ন প্রক্রিয়াই সম্পন্ন হবে মহিলা পুরোহিতদের হাত ধরে। অর্থাৎ, বলা যায় মেয়ের হাতেই পুজো পাবেন মা। এই বছর দুর্গাপুজোয় এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভবানীপুরের ৬৬ পল্লি সর্বজনীনের উদ্যোক্তারা।
এর আগে যে দুর্গাপুজোয় যে কখনও মহিলা পুরোহিত অংশগ্রহণ করেননি, এমনটা নয়। তবে তাঁরা থাকতেন আংশিক দায়িত্বে। কখনও পুজোর চণ্ডীপাঠ করেছেন, কখনও প্রধান পুরোহিতের আশে পাশেসহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মহিলারা। তবে ৬৬ পল্লির এই বারের পুজোতে কোনও পুরুষ পুরোহিতই থাকছেন না। এমনটা সম্ভবত এই প্রথম।
নন্দিনী ভৌমিক এবং তার মহিলা পুরোহিতদের দল বিয়ে, অন্নপ্রাশন, শ্রাদ্ধ ক্রিয়া ও গৃহপ্রবেশের মতো সামাজিক অনুষ্ঠানের দায়িত্বই সাধারণত সামলাতেন। তাই দুর্গা পুজোর প্রস্তাব আসা মাত্রই তা নাকচ করে দেন মহিলা পুরোহিত নন্দিনী। কিন্তু ৬৬ পল্লী পুজো কমিটির কর্তারা রীতিমত জেদ ধরে তাঁর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যান। এক সময় মহিলা পুরোহিত ‘শুভমস্তু’-র পক্ষ থেকে ৬৬ পল্লী পুজো কমিটিকে জানানো হয়, দুর্গাপুজো নিয়ে শাস্ত্র বিধান সম্পর্কিত বিশ্লেষণের পরেই তাঁরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে পারবেন। এই বছর মার্চ মাসেই ৬৬ পল্লির কর্মকর্তাদের পুজো করার বিষয়ে নিজেদের সম্মতির কথা জানিয়ে দেন নন্দিনী।
দক্ষিণ কলকাতার (South Kolkata Durga Puja) এই পুজো প্রতিবারই নতুন নতুন চিন্তা ভাবনা উপহার দেয়। গত বছর কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায়ের শতবর্ষ উপলক্ষে ৬৬ পল্লি এবং ৬৬ পল্লীর পাশের দুই পুজো কমিটি হাতে হাত মিলিয়ে তুলে ধরেছিল অপুর ট্রিলফি। অতীতে কলকাতার দৃশ্য অপূর্ব ভাবে ফুটিয়ে তুলে প্রশংসিত হয়েছে এই পুজো। এই বছর নারীশক্তিকে সম্মান জানাচ্ছে তারা। দেবীপক্ষে নারীদের উদ্দেশ্যে জ্ঞাপিত অনন্য সম্মানই এবার কেন্দ্রীয় আকর্ষণ হতে চলেছে ৬৬ পল্লির (66 Pally)।