হিন্দুদের অন্যতম পবিত্র তীর্থস্থান হল জম্মু ও কাশ্মীরের বৈষ্ণদেবীর মন্দির। মাতা বৈষ্ণদেবীর দর্শনে মনস্কামনা পূরণ হয়, এমন ধারাই বিশ্বাস। এই মন্দিরটি জম্মু-কাশ্মীরের কাটরাতে অবস্থিত। তবে এই মন্দিরকে ঘিরে প্রত্যেক বছরে হয় লক্ষ লক্ষ ভক্ত এর সমাবেশ। তারা আসেন দেবীর পুজো দেওয়ার জন্য। অনেকের মনোবাঞ্ছা পূর্ন হলে তারাও আসেন। কিন্তু কে এই মাতা বৈষ্ণদেবী। কেন তার মন্দির একটু দুর্গম পথের গুহায়। জানেন? এর সাথে জড়িয়ে আছে রামায়ণের পৌরাণিক উপাখ্যান।
পুরাণ অনুযায়ী দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত একটি ছোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ত্রিকুতা। রত্নাকর সাগর এবং তাঁর স্ত্রী বিবাহের পরে কোনো সন্তানাদির জন্ম দিতে পারেন নি। দীর্ঘদিন নিঃসন্তান থেকে অবশেষে সন্তানের জন্য উতলা হয়ে উঠেছিলেন তাঁরা। অবশেষে তাঁদের কোল আলো করে আসে এক কন্যাসন্তান। এই কন্যাসন্তানের জন্মের পরেই তাঁরা শপথ গ্রহণ করেছিলেন যে সন্তানের ভবিষ্যতের উপর তারা কোনরূপ হস্তক্ষেপ করবেন না। পরবর্তী সময়ে তাদের এই কন্যাই বৈষ্ণোদেবী নামে পরিচিত হয় সকলের কাছে। বৈষ্ণোদেবী মাত্র নয় বছর বয়সে রাম ও বিষ্ণুকে তুষ্ট করার জন্য তপস্যা করেন। অবশেষে ভগবান শ্রী রাম এবং শ্রী বিষ্ণু দুজনেই তার তপ ও প্রায়শ্চিত্তে সন্তুষ্ট হয়ে আশীর্বাদ করেন বৈষ্ণোদেবী কে।
রাম তাকে নির্দেশ একটি গুহার মধ্যে বসবাস করতে। সেই মত বৈষ্ণোদেবী সেখানে বসবাস শুরু করেন। তাঁর নিরাপত্তার জন্য শ্রীরাম চন্দ্র তাকে প্রদান করেন একটি সিংহ ,হনুমান ও তীর-ধনুক। এরপর থেকেই বৈষ্ণোদেবী ওই গুহায় অবস্থান শুরু করেন,যা পরবর্তীকালে মাতা বৈষ্ণোদেবী নামে পূজিত হয়। তবে কিভাবে তিনি এই দুর্গম স্থানে বসবাস করতে সক্ষম হয়েছিলেন তা নিয়ে আজও পর্যন্ত রহস্য রয়েছে। বৈষ্ণোদেবীকে পূজো অর্পণের উদ্দেশ্যেই সারা ভারতে নয় দিন ধরে নবরাত্রি পালন করা হয়। পুরাণ বলে যে মাতা বৈষ্ণোদেবী কলিযুগ চলাকালীন নিজের সন্তানের মতো ধরিত্রীকে রক্ষা করেছিলেন।
কীভাবে তৈরি হয়েছিল বৈষ্ণোদেবীর এই বিপদ সংকুল গুহা, যা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। এই মন্দিরটিকে ভক্তরা মনে করেন বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্রতম স্থান। স্থানীয় লোকজন ও ভক্তদের বিশ্বাস, মাতা বৈষ্ণোদেবীর মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে এক শক্তিশালী পজিটিভ এনার্জি। এই মন্দিরের মধ্যে রয়েছে তিনটি গুহা। বলা হয় আছে, সংকীর্ণ ও দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা পেরিয়ে বৈষ্ণো দেবীর মন্দিরে যে ভক্ত একবার যান, দেবীর দর্শন পাওয়ার পর তার সকল মনোবাঞ্ছা পূর্ন হয়।