টমেটো সস বা কেচাপের বোতল কম বেশি প্রায় প্রত্যেক বাড়ির খাবার টেবিলেই দেখতে পাওয়া যায়। এই ব্যাপারটা অত্যন্ত সাধারণ একটি ব্যাপার যেই কারণে আমরা খুব একটা খেয়াল করতে পারিনা। অনেকের তো আবার এই টমেটো সস ছাড়া কোনও খাবারই খাওয়া হয় না। অনেকে রান্নায় এই টমেটো সস দেওয়া পছন্দ করেন। বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বাড়াতেও ব্যবহার করা হয় এই সস। আপনার কি জানা আছে যে টমেটোকে এক সময় বিষাক্ত ফল বলে মনে করা হয়। আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে টমেটো সস কে দুর্গন্ধ যুক্ত নোংরা তরল বলা হত। তাহলে এবার ভাবছেন তো কিভাবে এই সস খাবারের সাথে যুক্ত হল? এই ব্যাপারে বিশদে জানতে আমাদের আজ থেকে প্রায় ১৫০০ বছর আগে ফিরে যেতে হবে।
শুধুমাত্র ওষুধ হিসাবে ব্যবহার হত এই সুস্বাদু টমেটো সস! চলুন সম্পূর্ণ টা জেনে নেওয়া যাক –
আমেরিকানরাই শেষ পর্যন্ত আসরে নামেন। কর্নেল রবার্ট জনসন নিউজার্সিতে একটি আদালতকক্ষের সামনে ১৮২০ সালে প্রকাশ্যে এক ঝুড়ি টম্যাটো খেয়ে প্রমাণ করেন টম্যাটো বিষফল নয়। আমেরিকাতে এর দশ বছরের মধ্যেই জনপ্রিয় হয় টম্যাটো।
১৮৩০ সাল নাগাদ ডাইরিয়া, বদহজম, জন্ডিস ইত্যাদি অসুখের ওষুধ রূপে টমেটো কেচাপ মূলত বিক্রি হত। পশ্চিমের এক প্রসিদ্ধ ডাক্তার ডাঃ জন কুক বেনেট নামক টমেটো কেচাপ কে রোগীদের ‘টমেটো পিলস’ নামক ওষুধের মোড়কে ব্যবহার করার উপদেশ দিতেন। পরবর্তী কালে এই ‘ওষুধ’-এর ব্যবহার ১৮৫০ নাগাদ উঠে যায়। অনেকেই এই টমেটো কেচাপের কোম্পানি খুলে ফেলেছে।
হেনরি হেইঞ্জ ১৮৭০ সালে আসরে নামেন। তাঁর কারখানার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য সুনাম ছিল। তাঁর নজরে আসে সারা বছর টম্যাটো সস ব্যবহারে সীমাবদ্ধতার বিষয়টি। নিজের পরিচ্ছন্নতার ধারাবাহিকতা সামনে আনতেই টম্যাটো সসের বোতলকে স্বচ্ছ রাখার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ১৯০৪ সালে তাঁর গবেষকেরা প্রিজারভেটিভস ছাড়াই তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। বাকিটা ইতিহাস। ৫০ লক্ষ বোতল দু’বছরের মধ্যেই বিক্রি করেন হেইঞ্জ। কেচাপ আরও নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর আসে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ভিনিগার বা অ্যাসেটিক অ্যাসিড কেচাপে থাকলেও টম্যাটো সসে্ তা থাকে না। আবার টম্যাটো সস্কে গরম করে রান্নায় ব্যবহার করা গেলেও কেচাপ ব্যবহার করা হয় ঠান্ডা অবস্থাতেই। তুমুল জনপ্রিয় হয় আমেরিকায় সস্ আর কেচাপ এই দু’টি প্রোডাক্টই । অন্যান্য মহাদেশে কয়েক বছরের মধ্যেই পাড়ি দেয়। সারা দুনিয়ায় অসংখ্য কোম্পানি আজ বানায় টম্যাটো কেচাপ আর টম্যাটো সস্। আর এখন তার ব্যবহারও ছড়িয়ে পড়েছে ঘরে ঘরে।