তুতানখামেন। কেবল এই একটি নাম দশকের পর দশক ধরে রোমাঞ্চিত করে আসছে সারা বিশ্বকে। সত্যিই কি তুতেনখামেনের মমি একটি অভিশাপ? ১৯২২ সালে মমিটি উদ্ধারের পরে কি সত্যিই সেই খনন কার্যের সঙ্গে যুক্তদের রহস্যময় মৃত্যু হয়েছিল? এ নিয়ে নানা ব্যাখ্যা রয়েছে। লেখা হয়েছে বহু বই।
কে এই তুটানখামেন
ফারাওদের ১৮তম রাজবংশের রাজাদের মধ্যে তুতানখামেন ছিলেন ১২তম। খ্রিষ্টপূর্ব ১৩৩৩ – ১৩২৪ অব্দ পর্যন্ত তিনি মিশরের রাজত্ব করেন। তিনি তার যুবতী বোন আনখেসেনামুন কে বিয়ে করেন। তুতানখামুনের পিতা ছিল আখেন-আতেন। তুতেন খামুন পিতার মৃত্যুর পর মাত্র নয় বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহন করেন এবং আবার পুরাতন ধর্ম অর্থাৎ “আমুন” এর উপাসনা প্রচলন করেন এবং সে অনুসারে নিজের নাম পরিবর্তন করে জনগনকে আশ্বস্ত করেন।
তুতেন খামেন এর মৃত্যু
তুতেন খামেনের মায়ের নাম ছিল তিয়ো এবং রাণী নেফারতিতি ছিল তার সৎ মা। তুতেন খামেনের বিয়ে হয় নেফারতিতির মেয়ে ও তার সৎ বোন রাণী আনখেসেনপাতেন এর সাথে। তাদের দুটি মৃত যমজ কন্যা সন্তান হয়েছিল যাদের কে পাত্রে ভরে ফারাও এর সমাধিক্ষেত্রেই সমাধিস্থ করা হয়। মৃত্যুর সময় তুতেন খামেন কোনো উত্তরাধিকারী রেখে যাননি। কোনো বংশধর না থাকায় ক্ষমতা দখলের লোভে তাকে হত্যা করা হয় বলে অনেকে মনে করেন।
তুতেন খামেনের মমি রহস্য
ফারাও হিসেবে তুতেন খামেন খুবই স্বল্প পরিচিত ছিল। ফলে অনেকেই তার সমাধিক্ষেত্রের সন্ধান পায়নি বা করেনি। কিন্তু হাওয়ার্ড কার্টার ও তার দল কর্তৃক তুতেন খামেনের সমাধিটি আবিষ্কারের পর চারিদিকে হইচই পরে যায়। এর মূল কারণ ছিল এই যে, সমাধিটি তখনো পর্যন্ত অক্ষত এবং এর ফলে এতে প্রাপ্ত ধন সম্পদ। যারা তুতেনখামেনের মমি আবিষ্কার করেন ঠিকই কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক ভাবে সেখানে লেখা একটি অভিশাপ খুঁজে পান । সেখানে লেখা ছিলো – ‘ রাজার শান্তি ভঙ্গকারীদের মৃত্যু ঘটবে । ‘
তুতেন খামেনের অভিশাপ
তুতেন খামেনের মমি সম্পদের সাথে সাথে অভিশাপও বয়ে এনেছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। প্রচলিত রয়েছে যে, কিং উপত্যকায় তুতেন খামেনের মমি আবিষ্কারের সাথে যারা জড়িত ছিল তারা প্রত্যেকেই তুতেন খামেনের অভিশাপ এর স্বীকার হয়ে রহস্যময় ভাবে মৃত্যু বরণ করেছেন।
মমি আবিষ্কারের পর থেকে একের পর এক রহস্যময় ঘটনা ঘটতে থাকে। এর সঙ্গে জড়িত প্রায় প্রত্যেকেরই রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে। সব নাকি তুতেন খামেনের মমির অভিশাপ। সারা বিশ্বেই এটি এখন তুতেন খামেনের অভিশাপ নামে পরিচিত।
যেদিন তুতেনখামেনের মমি আবিষ্কার হয়েছিল সেদিন রাতেই হাওয়ার্ড কার্টার তার বাসায় ফিরে এসে দেখতে পান তার হলুদ ক্যানারি পাখিটি মৃত্যুবরণ করে। তার বাড়ির কাজের লোক তাকে কয়েকটি হলুদ পালক দেখিয়ে বলে, একটি কোবরা তার ক্যানারি পাখিটিকে খেয়ে ফেলেছে এবং অনুরোধ করে বলেন, “ফারাওদের সাপ আপনার পাখিটিকে খেয়ে ফেলেছে কারণ এটি তাদের সমাধি খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে।
আবিষ্কারের কাজে যোগ দেন লর্ড কার্নার্বন। লর্ড কার্নার্বন সমাধিটি খোলার পর রহস্যজনক হলেও সতি্যকার অর্থেই আর বেশিদিন বাঁচেননি তিনি। গালে একটি মশার কামড়ের জন্য তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
তুতের সমাধি উন্মোচিত করার মাত্র ৭ সপ্তাহের মাঝেই লর্ড কার্নার্বন প্রচণ্ড কষ্ট পেয়ে মারা যান। খুবই রহস্যজনকভাবে ঐ রাতেই তার পোষা কুকুরটিও অদৃশ্য কিছু দেখে প্রচণ্ড গর্জন ও আর্তনাদ করতে করতে মারা যায়। লর্ড কার্নার্বনের মৃত্যুর সময় সমস্ত কায়রো শহর বিদ্যুতহীন ছিল। অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে যে, কার্নার্বনের মৃত্যুর মাত্র দুইদিন পরে তুতেন খামুনের মমিকৃতদেহটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, মমিটির বাম গালে কার্নার্বনের মত ঠিক একই জায়গায় একটি ক্ষত রয়েছে।
কিন্তু কার্নার্বনের মৃত্যুর কিছুদিন পর এ অভিযানের আরেকজন নেতৃস্থানীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ Arthur Mace হোটেল কন্টিনেন্টালে প্রচণ্ড রকম ক্লান্তি অনুভব করতে থাকেন এবং ডাক্তারসহ সবাইকে হতবুদ্ধ করে দিয়ে কিছুক্ষণ পরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
Joel Wood নামক একজন শিল্পপতি সমাধিটি ভ্রমণ করে দেশে যাওয়ার পথে প্রচণ্ড জ্বরে মৃত্যুবরণ করেন।
Archibald Reid নামক একজন রেডিওলজিস্ট তৎকালীন সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তুতেন খামেনের এক্স-রে রিপোর্ট করে তার বয়স এবং মৃত্যুর কারণ জানার চেষ্টা করেছিলেন। “প্রচন্ড ক্লান্ত” বলে তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে যান এবং ইংল্যান্ডে অবতরণের কিছুক্ষণ পরেই রহস্যজনকভাবে তার মৃত্যু ঘটে! তাদের প্রত্যেকের মৃত্যুর ব্যাপারে তেমন কোন তথ্য দিতে পারেননি ডাক্তারেরা।
পরবর্তীতে সমাধি খননের কাজে বিভিন্ন ভাবে জড়িত প্রায় ২১ জন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেন।
অনেকেই বলেন অভিশাপ টভিশাপ বলে কিছু নেই। আর এই ধারণার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল হাওয়ার্ড কার্টার। একমাত্র হাওয়ার্ড কার্টারই ১৯৩৯ সালে বৃদ্ধ বয়সে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তুতেনখামেন নিয়ে রহস্য রয়ে গেছে এবং আগামীতেও থাকবে। আপনার কি মত?