জিলাপি বা জিলিপি বাংলার এক অতি জনপ্রিয় মিষ্টি। ভারতীয় এবং তার আশেপাশের নানা দেশে মানে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশে এই যেকোনো মিষ্টির দোকানে এই জিলিপির প্রচলন আছে। পশ্চিমবঙ্গের তো কোনো জায়গা নেই যেখানে জিলাপি পাওয়া যায় না। রথের মেলা হোক কি পৌষমেলা জিলাপি ছাড়া তা যেন অসম্পূর্ণ। এই আড়াই প্যাঁচের মিষ্টিটি খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ মেলা ভার।
গরম গরম তেলে আড়াই প্যাঁচ কষে, তারপর রসে চুবিয়ে পরক্ষণেই বড় থালায় সাজিয়ে রাখা হয় এই অমৃত সমান মিষ্টি। কিন্তু বাঙালির এত প্রিয় জিলাপির জন্ম কিন্তু বহু দুর দেশে। কিভাবে দেশে এসে পৌঁছায় এই জিলাপি ? জানেন জিলাপির ইতিহাস?
জিলাপির ইতিহাস কিন্তু বেশ পুরোনো। এর সর্বাধিক প্রাচীন লিখিত বর্ণনা পাওয়া যায় মুহম্মদ বিন হাসান আল বোগদাদীর দ্বারা ১৩০০ শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফার সাম্রাজ্যের খাবার নিয়ে লেখা ‘কিতাব আল-তাবিখ’ নামের একটি রান্নার বইতে। যদিও মিশরে বসবাসকারী ইহুদিরা এর আগেই এই জিলাপি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছিল।
ইরানে আবার এই জিলিপি, জেলেবিয়া নামে পরিচিত, যা সাধারণত রমজান মাসে দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। সেই পশ্চিমের দেশ থেকেই মুসলমান বণিকদের মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশ করে এটি। বলা হয় সম্রাট জাহাঙ্গীরের সাথে এই জিলিপির ইতিহাসের যোগ আছে।
এই মিষ্টি সম্রাট জাহাঙ্গীরকে এতটাই প্রভাবিত করেছিল এবং তাঁর এতই প্রিয় মিষ্টান্ন ছিল যে তিনি নিজের নামের সাথে মিল রেখে এই জিলিপির নতুন নাম রাখেন। প্যাঁচানো গোলাকার আকৃতির ঘিয়ে ভাজা আর রসে ভেজানো সেই মিষ্টি খেয়ে মোহিত জাহাঙ্গীর ঘোষনা করলেন এই মিষ্টির নাম – “জাহাঙ্গীরা”।
কিন্তু প্রশ্ন হল ভারতে যার নাম বর্তমানে জিলাপি তার প্রাচীন নাম কী? ১৫০০ শতাব্দী নাগাদ সংস্কৃত ভাষায় লেখা এক পুথিতে ‘কুণ্ডলিকা’ এবং ‘জালাভালিকা’ নামের দুটি মিষ্টির নাম পাওয়া যায়। অনেক ইতিহাসবিদ জানিয়েছে, ‘কুণ্ডলিকা’ এবং ‘জালাভালিকা’ আসলে জিলিপিরই অপ্রভংশ নাম।বহু ইতিহাসবিদের দাবি, ফারসি শব্দ ‘জলবিয়া’ থেকে জিলাপি শব্দটা এসেছে।
আবার অনেকে বলেন, আরবি শব্দ ‘জুলেবিয়া’ হল জিলাপির প্রাচীন নাম। তাই যেই নাম ধরেই ডাকা হোক না কেন বিদেশ থেকে আগত এই মিষ্টি স্বাদ যে অতুলনীয় সেকথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এই কারণেই যুগযুগ ধরে এই ভীষণ প্রিয় এই প্যাঁচের মিষ্টি রয়ে গেছে নিজের ঐতিহ্যকে বজায় রেখে।