একজন মা তার নিজের জীবনের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসেন তার সন্তানকে। যা পৃথিবীতে অন্য কেউ আর পারে না। সন্তানের সুরক্ষার প্রশ্নে যে নিজের জীবনটা অনায়াসে বিসর্জন দিয়ে দিতে পারেন একজন মা। এটা যে কেবল কথার কথা নয়, ফের তা একবার প্রমাণিত হলো চীনে। চীন প্লাবিত হয়েছে প্রবল বন্যায়। সেই মারাত্মক বন্যার তোড়ে ভেসে গিয়েছে সব কিছু, ধেয়ে আসছে ধসে পড়া কাদা মেশানো জলের স্রোত। এ অবস্থায় সবাই প্রত্যেকে কিভাবে নিজের প্রাণ বাঁচাবে তাই নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু বাক্তিক্রম শুধুমাত্র হয় মায়েরাই। এমন অবস্থায় ছোট্ট সন্তানকে বাঁচাতে নিজের প্রাণটা বিসর্জন দিলেন মা। এই হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে চিনের হেনান প্রদেশে। বন্যা আর ভূমিধসে কার্যত বিধ্বস্ত হেনান। সেইখানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার করতে গিয়ে কাদামাটির ভিতর থেকে ওই ছোট্ট শিশুটিকে উদ্ধার করে চিকিত্সার জন্য পাঠিয়েছেন উদ্ধারকারীরা। আর শিশুটিকে বাঁচাতে যে মা বিসর্জন দিয়েছেন নিজের প্রাণ, সেই মহান মায়ের নিথর দেহও উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু বন্যায় ভেঙ্গে পরা ধসের স্তুপে উদ্ধারকার্য চালাতে গিয়েই যেন নজর দাড়িয়ে গিয়েছে উদ্ধারকারী দলের। কেননা ধ্বংসস্তুপ সরানোর সময়ে ওই মহিলার নিথর দেহ যে অবস্থায় দেখা গিয়েছে, তাতে স্পষ্ট, তিনি যেন কোনও কিছু উপরের দিকে তুলে ধরে রেখেছেন। অর্থাৎ তার সন্তানকে। সন্তানের জন্য মায়ের বলিদানের এই তালিকায় নতুন করে নাম লেখালেন চীনের হেনান প্রদেশের এই মা।
গত কয়েকদিন ধরেই তুমুল বৃষ্টি আর বন্যায় বিপর্যস্ত চিনের হেনান প্রদেশ। বলা হচ্ছে সেখানে নাকি চীনের বন্যার ইতিহাসের হাজার বছরের রেকর্ড ভাঙ্গা হয়ে গেছে। অবিশ্রান্ত বৃষ্টি আর বন্যার জলের তোড়ে ভেঙে পড়েছে বহু বাড়িঘর। জলের তলায় ডুবে গিয়েছে সড়ক সহ বিস্তীর্ণ শহর ও জনবসতি। কাদামাটি মেশানো জলের স্রোত কেড়ে নিয়েছে অন্তত ৫১ জনের প্রাণ। নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৪ লাখেরও বেশি স্থানীয় বাসিন্দাকে। বন্যার জলের তোড়ে শহরের বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনীকেও নামতে দিয়েছে।
অন্যদিকে, প্রবল বন্যায় সব ডুবে গিয়ে হেনান প্রদেশের রাস্তাগুলো নদীর চেহারা নেয় এমনটাই নানা সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। জলের প্রবল স্রোতে বহু গাড়ি ভেসে যেতে থাকে। হেনান প্রদেশে মোট ১২টিরও বেশি শহরে বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এহেন প্রবল বন্যা বিপর্যস্ত হেনান প্রদেশে উদ্ধারকার্য চালাতে গিয়ে ধ্বংসস্তুপ মধ্যেও প্রাণের স্পন্দন অর্থাৎ কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন উদ্ধারকারীরা।যদিও কাদামাটি মেশানো এই ধ্বংসস্তুপের মধ্যে থেকে শুরুতেই যে নবজাতকটির কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন ঝাও নামে স্থানীয় এক ব্যাক্তি। তিনিই উদ্ধারকারীদের তড়িঘড়ি খবর পাঠান। শিশুটিকে ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে খুঁজে পাওয়ার পরেই কোথায় শিশুর মা, সেই খোঁজ শুরু করে দেন উদ্ধারকারীরা। বেশ কয়েক ঘন্টা বাদে মায়ের প্রাণহীন দেহও উদ্ধার হয়। শুধু মরদেহ থেকেও যেন ঝলক দেখা যাচ্ছে অদম্য জেদ সন্তান কে আগলে রাখার।