সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভিডিও কল করে ব্ল্যাকমেইল করা একজনকে গ্রেফতার করেছে গাজিয়াবাদ পুলিশ। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মানুষকে নিজের প্রতারণার শিকার বানিয়েছিলেন এই ব্যক্তি। নূহ মেওয়াতের বাসিন্দা এই ব্যাক্তির নাম জাকির। অভিযুক্ত জানায়, সে মহিলাদের নামে ফেসবুকে ভুয়ো আইডি তৈরি করত। ফেসবুকে মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে চ্যাটের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর নিতেন।
আসামি জাকির ভুয়ো আইডি ব্যবহার করে সিম নিতেন। এতে তাকে সহযোগিতা করতেন রায়পুরের বাসিন্দা তার শ্যালক মুফিক। যার মাধ্যমে তারা মানুষের সাথে আলাপচারিতা শুরু করতেন। যখন তারা বিশ্বাস করে যে সামনের ব্যক্তিটি তাদের ফাঁদে পুরোপুরি আটকা পড়েছে। তারপর তারা তাকে ভিডিও কলে প্রেমালাপ চালাতে প্ররোচিত করে। ওপর প্রান্তের লোকটি বিশ্বাস করে যে সে একটি মেয়ের সাথে কথা বলছে। এবং ভিডিও কলে কথা বলতে প্রস্তুত হয়ে যায়।
ভিডিও কল শুরু করার আগে, এই প্রতারকরা অন্য ফোনে আরেকটি অশ্লীল ভিডিও চালাত এবং সেটি সেই ফোনের সামনে রাখত যেটি থেকে ভিডিও কলে সামনে উপস্থিত ব্যক্তির সাথে কথা বলা হবে। ভিডিও কল শুরু হওয়ার সাথে সাথে, সামনের ব্যক্তিটি মেয়েটির ভিডিও দেখতে পেত। এবং এই গোটা ঘটনার স্ক্রিন রেকর্ডিং এবং স্ক্রিন শট নিয়ে নিত প্রতারকদের চক্রটি। এই চক্রের লোকেরা তিন থেকে চার বার এই ধরনের ভিডিও কল রেকর্ড করত।
এর পরে, অন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে, তারা ক্রাইম ব্রাঞ্চের ডিসিপি, ডেপুটি এসপি, অফিসার বিক্রম রাঠোর বা অন্য যে কোনও নামে পুলিশ হিসাবে পরিচয় দিয়ে হুমকি দেওয়া শুরু করতো। তারা হুমকি দিত যে আপনি অনলাইনে কোনও মেয়ের সাথে অন্যায় করেছেন। এ বিষয়ে মেয়েটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। পাশপাশি এও বলতো যে এই ভিডিওটি ইউটিউবে ভাইরাল হতে চলেছে এবং গ্রেপ্তারের হুমকিও দেওয়া হত। বলা হতো যে আপনি যদি আপনার সম্মান বাঁচাতে চান তবে অবিলম্বে ইউটিউব ম্যানেজার গৌরব মালহোত্রার সাথে যোগাযোগ করুন। যার নম্বর এই লোকেরা নিজেরাই সামনের ব্যক্তিকে দিত। ভিডিও মুছে দিতে ইনিই পারবেন। ইউটিউব ম্যানেজারের দেওয়া নম্বরে কথা বললে অভিযুক্তরা তাকে ভিডিও ডিলিট করার বিনিময়ে টাকা চাইতো।
যে ব্যক্তি এসব হুমকিতে ভয় পেত তারা তাদের দেওয়া paytm, phonepe, google pay, airtel পেমেন্ট ব্যাঙ্কের নম্বরে টাকা দিয়ে দিত। ভুয়া ঠিকানায় খোলা হতো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। এরপর ভীত ব্যক্তিকে এক-দুইবার হুমকি দিয়ে আরও টাকা হাতিয়ে নেওয়া হতো।
সমাজে অসম্মানিত হওয়ার কারণে নির্যাতিতরা কারো কাছে অভিযোগও করতো না। এই লোকেরা প্রায়শই আরও মোটা টাকা হাতাতে ক্রাইম ব্রাঞ্চ অফিসার হয়ে নিজেরাই নগদ সংগ্রহ করতে যেত। অনলাইনে পেমেন্ট নিতে তারা সবসময় ভুয়া সিম মোবাইল এবং ভুয়া ঠিকানায় খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতো। গত ২-৩ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে শত শত মানুষকে এই ধরনের প্রতারণার শিকার করেছে এই চক্র। এই চক্রের বাকি সহযোগীদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।