ছোট্ট একটি দ্বীপ। কিন্তু সেখানে পা দিলেই শিউরে উঠবেই গা। দ্বীপের গাছপালা থেকে ঝুলছে ভয়ঙ্কর সব পুতুল। কোনো পুতুল মুন্ডু বিহীন তো কারও একটা চোখ নেই বা দুটো চোখই উপড়ানো। কারও চুল ছেঁড়া ছেঁড়া। কারও আবার হাত বা পা নেই। দেখলেই যেন মনে পড়ে হাড় হিম করা আনবেলের কথা। কতদিন ধরে ঝুলছে এই সব পুতুল। কিন্তু কে ঝুলিয়েছিল ডালে এই সব পুতুল? কি উদ্দেশ্য ছিল? শুনলে শিরদাঁড়া ঠান্ডা হয়ে যায়।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটি (Mexico City) থেকে প্রায় ১৭ মাইল দক্ষিণে রয়েছে জোকিমিলকো জেলা। সেখানেই এই ভয়াবহ দ্বীপ যাকে স্থানীয়দের ভাষায় বলা হয় নাম ইলসা ডে লাস মিউনিকাস বা মৃত পুতুলের দ্বীপ (Island of the Dead Dolls)। এই স্থানে রয়েছে হাজার হাজার মৃত পুতুল। ভাবছেন পুতুল কী করে মৃত হয়? এর পেছনে রয়েছে একটি ইতিহাস।
১৯৫০ সালে ডন জুলিয়ান সানতানা নামে এক যাজক নাগাদ এই দ্বীপে আসে তপস্যা করতে। সেই দ্বীপের পাশে একটি বাচ্চার মৃতদেহ ভেসে উঠেছিল। বলা হয় বাচ্চাটি পুতুল নিয়ে খেলা করার সময় জলে পরে মারা যায়। জুলিয়ান সেই মৃত শিশুটিকে এই দ্বীপের একটি জায়গায় তাকে কবর দিয়ে দেয়। এরপর কেটে যায় সময়। এরপর একদিন তিনি একদিন একটি পুতুল পেয়েছিলেন জলের ধারে। তিনি ভাবলেন হয়তো ওই পুতুলটি ওই মৃত শিশুটির ছিল। এই ভেবে তিনি ওই মৃত শিশুটির নাম করে সেই পুতুলটির ঝুলিয়ে দেন একটি গাছে । বলা হয় এরপর থেকে শুরু হয়ে যায় ওই শিশুটির আত্মার আবদার।
ওই শিশুটির আত্মা নাকি রোজ জুলিয়ানকে বলে একটি করে পুতুল নিয়ে আসতো ওই দ্বীপে। যা গাছ থেকে ঝুলিয়ে দিতে হত। কিন্তু পুতুলগুলো হতে হবে ভাঙাচোরা। ভালো পুতুল নয়। বিভৎস দেখতে সব পুতুল চাইত জুলিয়ানের কাছে ওই শিশুটির আত্মা। যেগুলো দেখলে মানুষের মনে আতঙ্ক হবে। জুলিয়ান তার আশ্রমে ফলানো সবজির বিনিময়ে লোকজনের থেকে নষ্ট হয়ে যাওয়া পুতুল সংগ্রহ করতে থাকেন। এরপরই এই জায়গা ঘিরে লোকের গা ছম ছম বাড়তে থাকে।
অনেকদিন এমন চলার পর হঠাৎই একদিন ওই দ্বীপে জুলিয়ানকে পাওয়া যায় মৃত অবস্থায়। সবার ধারণা বদ্ধমূল হয় জুলিয়ানের এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর পেছনে ওই শিশুটির আত্মা রয়েছে। এরপর থেকে এই দ্বীপকে বলা হয় মৃত পুতুলের দ্বীপ। গা ছমছমে এই অদ্ভুত পরিবেশের জন্য পর্যটকদের কেউই ওই দ্বীপে আসতে চান না। সরকার থেকে তাদের মনের এই ধারণা দূর করতে চাইলেও লাভ হয়নি খুব একটা। বাস্তবতা কিংবা কল্পনার জ্বলে বোনা এই দ্বীপ এখনো অনেক অজানা আতঙ্ক তৈরি করে যাচ্ছে।