আপনি হয়তো স্বপ্নেও ভাবতে পারবেন না তিন কোটি টাকার রোলস রয়েসে চড়ে অফিসে আসবেন। কিন্তু রমেশ বাবু পারেন। তিনি পারেন রোলস রয়েসে চেপে সেলুনে যেতে। ভাবছেন তো, এই রমেশ বাবু কে? শুনলে আরও অবাক হবেন।
যাদের সম্পত্তির পরিমাণ ১০০ কোটিরও বেশি তাদের বিলিয়নিয়র বলে জানি আমরা। আর এদেরই একজন হলেন ব্যাঙ্গালোরের রমেশ বাবু। ভারতের বাকি ধনকুবেরদের থেকে তিনি একেবারে ব্যতিক্রমী। কারণ, শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও, তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন একজন সামান্য নাপিত হিসাবে। আর সেখান থেকে আজ এমন এক জায়গায় উঠে এসেছেন, যেখানে এখন তিনি রোলস রয়েজ, মার্সিডিজ-বেঞ্জ, জাগুয়ার এবং বিএমডব্লিউ-এর মতো উচ্চমানের বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডেড গাড়ি-সহ মোট ৪০০টিরও বেশি গাড়ির মালিক।
বিষয়গুলো আগে এত সোজা ছিল না। ১৯৮৯ সালের কথা। রমেশের বাবা মারা গেলেন। রেখে গেলেন একটা ছোট্ট সেলুন, রমেশ তখন কিশোর। রমেশের মা দোকানটি দিনে মাত্র পাঁচ টাকার বিনিময়ে ভাড়া দিলেন আর মানুষের বাড়িতে কাজ নিলেন। এভাবেই সংসার চলত তখন। ১৯৯৪ সালে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, আর পড়ালেখা নয়। বাবার ব্যবসার হাল ধরতে হবে। তাঁর স্কুলের পাশেই ছিল সেলুনটি। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাধারণ নাপিতের দোকানটিকে তিনি একটি ট্রেন্ডি হেয়ার-স্টাইলিং সালোনে পরিণত করেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন ‘ইনার স্পেস’। রমেশের হাতে শিগগিরই সেটি তরুণদের পছন্দের এক সেলুন হেয়ার স্টাইলিং জোন হয়ে ওঠে।
রমেশ বুঝতে পেরেছিলেন তার ব্যবসা বাড়াতে হবে। নাহলে তার পরের প্রজন্মকেও ই চুল কাটার কাজই করে যেতে হবে। সালোনের থেকে যে অর্থ জমেছিল, তা দিয়ে এবং তার কাকার কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে সেই বছর তিনি একটি মারুতি ওমনি ভ্যান কিনেছিলেন। তিনি সালোনে কাজ করেন, তাই নিজে চালানোর সময় নেই। অন্য চালককে গাড়িটি ভাড়া দিয়েছিলেন। আর এটাই ছিল, রমেশ বাবুর সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার প্রথম ধাপ। ক্রমেই লাভের টাকা থেকে একের পর এক গাড়ি কিনে ভাড়া দিতে শুরু করেছিলেন তিনি। যানবাহন বহরের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ব্যবসার বহরও।
তার জীবনের দ্বিতীয় বড় মোড় এসেছিল ২০০৪ সালে। ওই বছর তিনি তার প্রথম বিলাসবহুল গাড়িটি কিনেছিলেন, মার্সিডিজ ই ক্লাস সেডান। দাম ছিল ৩৮ লক্ষ টাকা! এতদিন পর্যন্ত অন্যান্য ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেল সংস্থার সঙ্গে তার বিশেষ পার্থক্য ছিল না। কিন্তু মার্সিডিজটি কেনার পরই তিনি বিলাসবহুল গাড়ি কিনে, বিত্তশালীদের ব্যবহারের জন্য সেই গাড়িগুলি ভাড়া দিতে শুরু করেন। আজ, বিএমডব্লিউ, রোল রয়েস গোস্ট, মার্সিডিজ মেবাখ – এমন কোনও বিলাসবহুল গাড়ি নেই, যা তার সংগ্রহে নেই। রমেশ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস-এর হাতে এখন এইসব টপ-এন্ড গাড়িগুলি ছাড়াও টয়টা ইনোভার মতো সাধারণ গাড়ি, বাস ইত্যাদি মিলিয়ে প্রচুর গাড়ির সম্ভার রয়েছে।
তবে এখানেই থেমে থাকবেন না রমেশ, চান আরো! ‘আরো অনেক কিছু করার আছে। যত দিন সাধ্য আছে তত দিন কাজ চালিয়ে যাব’- নাপিতের কাজটা বাদ না দেওয়ার দিকেই ইঙ্গিত করেন রমেশ।বিশাল বিত্তশালী হয়ে উঠলেও পুরনো পেশা বা কাজকে কখনোই ভুলতে চান না রমেশ। এখনো নিজ হাতে সাধারণ খদ্দেরদের চুল কাটান মাত্র ৬৫ রুপিতে।
শত শত কোটি টাকার মালিক ভারতের এই নাপিত। সেলুনে রোজ আসেন নিজের বিলাসবহুল রোলস রয়েস গাড়িটি চালিয়ে। এই নাপিতের কোটিপতি হয়ে ওঠার কাহিনী আপনাকে অবাক করবে।