করোনা প্রথম ঢেউ তে মানুষের কাছে ছিলো না কোনো ভ্যাকসিন। কিন্তু এরপর এই বছরের শুরুতেই হাতে আসে কোভিড টিকা। ব্রিটেন বিশ্বে সর্বপ্রথম টিকাকরণ শুরু করেছিল। তার পরে আমেরিকা ও ইজ়রায়েল কোভিডের প্রতিষেধক দেওয়া শুরু করে। কিন্তু গতিতে সকলকে ছাপিয়ে প্রথম ইজ়রায়েল টিকাকরণে। প্রায় সম্পূর্ণ এ দেশে ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ। মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই বলে মাস খানেক আগে সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু বন্ধ রাখা হয়েছিল সীমান্ত মিউটেটেড স্ট্রেনের প্রবেশ আটকাতে। শেষরক্ষা তাতেও হল না।
ডেল্টা স্ট্রেনে ইজ়রায়েলে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, টিকা নিয়েও সংক্রমিত হচ্ছেন বাসিন্দারা ডেল্টা স্ট্রেনে। টিকার দু’টি ডোজ় নেওয়া থাকলেও কোনও ব্যক্তি ডেল্টা ভ্যারিয়্যান্টে আক্রান্তের সংস্পর্শে এলে তাঁকে কোয়রান্টিন করা হবে বলে মন্ত্রকের ডিরেক্টর-জেনারেল চেজ়ি লেভি জানিয়েছেন। এই নির্দেশিকা ২৩ জুন থেকে জারি হয়েছে। লেভির কথায়, ‘‘সংক্রমিতের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত খুবই কম। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে কেউ এই ভ্যারিয়্যান্টে আক্রান্ত হতে পারেন টিকা নেওয়া থাকলেও। টিকা নিয়ে কত জন আক্রান্ত হয়েছেন, এখনও জানা যায়নি সেই সংখ্যাটা। খোঁজ চলছে।’’
বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট-ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি সরকারি ভাবে গত মঙ্গলবার ঘোষণা করেছেন, সংক্রমণ বাড়ছে দেশে। ইজ়রায়েলে একেবারে কমে গিয়েছিল গণটিকাকরণের জেরে কোভিড সংক্রমণ। নতুন করে সংখ্যাটা যে ফের বাড়ছে, তা দেশবাসীকে জানিয়ে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ-ও জানিয়েছেন, কোনও ব্যক্তিকে সরকারের তরফে যদি নিভৃতবাসে থাকতে বলা হয়, সেই নির্দেশ তাঁকে মানতে হবে। সেই সঙ্গে সকলকে ফের মাস্ক পরতে হবে। বিশেষ করে কোনও বদ্ধ জায়গায় থাকলে, যথেষ্ট অবলম্বন করতে হবে সাবধানতা।
ইজ়রায়েলের করোনা টাস্ক ফোর্সের প্রধান নাচম্যান অ্যাশ বলেন, ‘‘ দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে কয়েক দিন অন্তর। আগে হয়তো বেশি হচ্ছিল দেশের দু’টো শহরে সংক্রমণ। এখন সংখ্যাও বেড়েছে আক্রান্ত শহরের । খুবই উদ্বেগের।’’
বিশেষজ্ঞদের ব্রিটেনের একটি রিপোর্টও চিন্তা বাড়িয়েছে। এক বৃদ্ধের ৭২ বছর বয়স তার কোভিড পজ়িটিভ ধরা পড়েছে টানা দশ মাস। ৪৩ বার পজ়িটিভ ধরা পড়েছে ব্রিস্টলের ওই বাসিন্দার। তাঁকে সাত বার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। একবার পরিকল্পনাও করে ফেলা হয়েছিল শেষকৃত্যের। অবশেষে অবশ্য ভাল হয়েছেন। তিনি একটি ব্রিটিশ দৈনিককে সম্প্রতি দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, জীবনের সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। বিদায় জানিয়ে পরিবারের সকলকে দিয়েছিলেন। এড মোরান তাঁর চিকিৎসক বলেন, ‘‘অনেক সময় পরীক্ষার রিপোর্ট মৃত ভাইরাসের জন্য পজ়িটিভ আসে। কিন্তু শরীরে ভাইরাস জীবিত ছিল ওঁর ক্ষেত্রে , সক্রিয় ছিল।’’
আবার ব্রিটেনের অন্য একটি নজরদারি সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, লং কোভিড বা দীর্ঘ কোভিড হয়েছে অন্তত ২০ লক্ষ মানুষের। কোনও না কোনও উপসর্গ রয়েছে, অর্থাৎ কোভিড ধরা পড়ার তিন-চার মাস পড়েও। হয়তো তিনি হয়ে গিয়েছেন কোভিড-নেগেটিভ, কিন্তু লক্ষণ রয়েছে। এই সব উপসর্গ কিছু ক্ষেত্রে বেশ গুরুতর।