একজন মা সর্বোপরি মা। যে মায়ের স্নেহের পরশে, কোলে সে বড় হচ্ছিল আস্তে আস্তে, সে যে এই পৃথিবী ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেছে তা পাঁচ বছরের এই শিশুটি মোটেও জানত না। সেখান থেকে ফেরা কারো পক্ষেই অসম্ভব। কিন্তু পাঁচ বছরের এই শিশুটি তার সাথে কি ঘটে গেছে সেটা বোধগম্য করতে না পেরেই রেল স্টেশনে মায়ের সাথে খেলতে থাকে এবং ঘন্টার পর ঘন্টা তার গায়ের সাথে লেপটে থাকে। কিছুক্ষণ পর তার খিদে পেল, সে তার মাকে তোলার চেষ্টা করল, কিন্তু মা একটুও নড়ল না। অবোধ শিশু ভাবল মা ঘুমিয়ে পড়েছে এবং সেও খিদের জ্বালায় কাঁদতে কাঁদতে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ে।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেলেও মহিলাকে একইভাবে শুয়ে থাকতে দেখে রেলস্টেশনে জিআরপি কর্মীদের সন্দেহ হয়। যখন তারা দেখেন যে মহিলার শরীরে কোনও নড়াচড়া নেই এবং বাচ্চাটি তাকে জড়িয়ে অঘোরে ঘুমাচ্ছে, তখন তারা হতবাক হয়ে যায়। যখন তারা ওই মহিলাকে সেখান থেকে তুলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় তখন জানতে পারা যায় যে মহিলাটি মারা গেছে।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা বিহারের ভাগলপুর রেলওয়ে স্টেশনের। সোমবার গভীর রাতে মৃত মাকে জীবিত ভেবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একইভাবে মাকে জড়িয়ে ঘুমিয়েছিল শিশুটি। রেল প্রশাসনের পাশাপাশি যাত্রীরাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁকে সেই ভাবেই দেখেন। কয়েক ঘণ্টা অতিবাহিত হলে বিষয়টি জিআরপির নজরে আসে, তারপর জানতে পারা যায় ওই মহিলার মৃত্যু হয়েছে। জানা গিয়েছে, সে একজন ভিক্ষুক ছিল এবং রেলস্টেশন ও আশপাশের এলাকায় ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করত।
জিআরপি আধিকারিকদের ঘটনাটি জানায় এবং মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। বর্তমানে পাঁচ বছরের বাচ্চাটিকে চাইল্ড লাইনের টিমের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সে কিছু বলতে পারছে না। অনেক দিন ধরে ঠিকমতো খাবার না পাওয়ায় অপুষ্টিতেও ভুগছে সে। সদর হাসপাতালে তার করোনা ও ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। এখন তার অবস্থা আগের চেয়ে ভালো বলে জানা গেছে।