শিয়ালদহ থেকে বনগাঁ যাওয়ার পথে পরে গোবরডাঙা স্টেশন। আর এই গোবরডাঙা স্টেশনেই সাড়ে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্ম। এই অদ্ভুতুড়ে নম্বর নিয়ে মানুষের কৌতূহলের অন্ত নেই। সারা ভারতের মধ্যে একমাত্র এই গোবরডাঙা স্টেশনেই এরকম অদ্ভুত সাড়ে অর্থাৎ হাফ নম্বরের প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মকে জুড়েই রয়েছে নানা কাহিনী।
পূর্ব রেলের শিয়ালদহ-বনগাঁ লাইনের এক অন্যতম ব্যাস্ত স্টেশন গোবরডাঙা। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অন্তর্গত বেশ পুরনো এই জনপদে ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড কার্জনের সময়ে নির্মিত হয়েছিল এই রেলস্টেশনটি। কিন্তু এই গোবরডাঙ্গা স্টেশনে এই সাড়ে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্ম আজও সেই ভাবে আলোচিত হয়নি। লোকচক্ষুর আড়ালেই রয়ে গিয়েছে এই ঐতিহাসিক নির্দশন। প্ল্যাটফর্মটির পরিচর্যার অভাবে বেশিরভাগ মানুষ জানেই না এর পেছনের মজার ইতিহাস। এই সাড়ে তিন নম্বর প্লাটফর্মটি রয়েছে গোবরডাঙা স্টেশনের তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের বাঁদিকে। প্রায় জঙ্গলে ঢাকা পরে যাওয়া ওই ছোট্ট প্ল্যাটফর্ম প্রায় নজরে আসেই না। কিন্তু এই স্টেশনটি আজও গোবরডাঙার সমৃদ্ধ জমিদারদের ইতিহাস বহন করে চলেছে। সেখানে একটু খোঁজ খবর করলেই শোনা যায় ওই ছোট্ট প্ল্যাটফর্মটির কাহিনী, যা এলাকার লোকজনের কাছে প্রচলিত ‘সাড়ে তিন নম্বর’ প্ল্যাটফর্ম নামে।
এই প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ঐতিহাসিক কাহিনী। জানা যায় গোবরডাঙার জমিদারদের শখ ছিল হাতি পোষার। সেই জমিদার বাড়ির হাতিশালে বহু দেশের হাতি পোষা হত। সেই জমিদারের এই শখের বিষয়ে জানতে পেরে বাংলাদেশের এক নবাব হাতি নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। হাতি পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের নবাবের থেকে জরুরি তলব পৌঁছল গোবরডাঙার জমিদারের কাছে। জমিদার পড়লেন চিন্তায়। হাতি এত দ্রুত কিভাবে পাঠাবেন বাংলাদেশে। তখন বনগাঁ শাখা দিয়ে শিয়ালদহ থেকে বাংলাদেশের খুলনা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করতো। জমিদারের সাহায্যার্থে এগিয়ে এলেন ব্রিটিশ শাসকরা। যাতে হাতি ট্রেনে করে বাংলাদেশে পাঠানো যায় সেই জন্য গোবরডাঙা স্টেশনের একপাশে একটা ছোট প্ল্যাটফর্ম তৈরী হল। যেটা আকারে বাকি প্ল্যাটফর্মের তিনভাগের একভাগ হবে। সেই ছোট প্ল্যাটফর্মই হল গোবরডাঙা স্টেশনের ঐতিহাসিক সাড়ে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্ম। যদিও এই বিষয়ে রেলের কাছে কোনও প্রামাণ্য নথি নেই।
১৮৮৩ সালে এই স্টেশন তৈরী হয়েছিল। তখন গোবরডাঙ্গা স্টেশনে তিনটে প্ল্যাটফর্ম ছিল। পরে এই ছোট প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়। এটাকেই সাড়ে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্ম নাম দেওয়া হয়। ব্রিটিশ সময়ে নির্মীত এই রেল প্ল্যাটফর্মকে হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করার দাবিও উঠেছে।