কলকাতার পুজো জগৎবিখ্যাত, আর এই কলকাতাতেই আছে বাগবাজার সর্বজনীন। যত সাবেকি পুজো আছে এখনও কলকাতায় তার মধ্যে বাগবাজার সার্বজনীন অন্যতম জায়গা দখল করে আছে। যদি আপনি নতুনত্ব আর সাবেকিয়ানার মিলিত কোনও পুজো দেখতে চান তবে তা বাগবাজার সার্বজনীন। সমস্ত উত্তর কলকাতার মানুষ দের একজোট করে দেয় এই পুজো। খোলা মণ্ডপ থাকে বিরাট মাঠের মাঝে আর মায়ের অপরূপ সৌন্দর্য হাজার হাজার মানুষ কে কাছে টেনে আনছে প্রতিবছর।
বহু মানুষ এর ভিড় হয় এই বাগবাজার সর্বজনীনের মহাষ্টমীর পুজো দেখতে। এখানে চিরাচরিত প্রথা মতো প্রতিমা সাবেকি। এবার ১০৩ বছরে পড়ল বাগবাজারের পুজো। অনেক বিপ্লবী পরাধীন ভারতে বাগবাজারের এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তখন থেকেই নানা শারীরিক কসরতের মাধ্যমে, শরীরচর্চা, লাঠিখেলা ইত্যাদি ভাবে অষ্টমীর দিন দেবীকে অঞ্জলি দেওয়া হয়।
এই বীরাষ্টমী আজও মাতৃ আরাধনার অঙ্গ বাগবাজার সর্বজনীনে। কথিত আছে, বীরাষ্টমী উৎসব সুভাষচন্দ্র বসু চালু করেন । সাহেবরাই শক্তিমান, বাঙালি ভীরু, দুর্বল জাতি সেকালে এরকমই একটা ধারণা ছিল। বীরাষ্টমীর উদ্যাপন এই ভাবনা খর্ব করতেই । সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জুডো, ক্যারাটে, বক্সিংও তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে । এই বীরাষ্টমী স্বদেশী যুগে ছিল জনসংযোগের এক দারুণ মাধ্যম। শোনা যায়, জনতার ভিড়ে মিলেমিশে যেতেন অনুশীলন সমিতির বিপ্লবীরা এই বীরাষ্টমীতে । তাই অনেক পরিকল্পনা থাকত তাঁদের বছরের এই দিনটায় ।
মায়ের সাজ নয়নাভিরাম বাগবাজার সর্বজনীন পুজোর । দেবীর শিরে বিরাট মুকুট জ্বলজ্বল করে । নিকটবর্তী নেবুবাগানে ১৯১৯-এই শুরু হয় এই পুজো । স্থান অনুসারে ‘নেবুবাগান বারোয়ারী’ পুজোর নাম হয় । ১৯২৬-এ বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসব এই ‘নেবুবাগান বারোয়ারী’ই নাম পাল্টে হয়।
অনেক বড় বড় ব্যক্তিত্বের নাম এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ।তারকা সমাহার বলা যায় । এই পুজো মণ্ডপে সুভাষচন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, আশাপূর্ণা দেবী, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, বালক ব্রহ্মচারী, সাহিত্যিক অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, আরও কতশত ব্যক্তিত্বের পা পড়েছে । আজও সেই ঐতিহ্য রক্ষা করে চলেছে এই পুজো সগর্বে ।