এই জমিদার বাড়িতে দুর্গার সঙ্গে পূজিত হন আরও একুশ দেবতা। এদের প্রত্যেকেই উপস্থিত আছেন জমিদার বাড়িতে। মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান জমিদার বাড়ির দুর্গা (Durga Puja of Dhuliyan) ‘বাইশ পুতুলের পুজো’ বলেই সকলের কাছে বিখ্যাত। অনেক ওঠা পড়ার মধ্যে দিয়ে কাঞ্চনতলা জমিদার রাঘবেন্দ্র নাথ রায়ের বাড়ির ‘বাইশ পুতুলের’ দুর্গাপুজো অতিক্রম করলো প্রায় ৩০০ বছর।
ইদানিং মু্র্শিদাবাদে এই দুর্গা পুজো হলেও এই পুজোর সূত্রপাত হয়েছিল মালদহ (Malda) জেলার দেওনাপুরে। এই বনেদি পরিবারের প্রয়াত সদস্য রাঘবেন্দ্র রায় ছিলেন এলাকার জমিদার। মালদা জেলার গঙ্গার ভাঙন ও বন্যার জেরে ভীষণ দুর্ভোগ সইতে হত তার পরিবারকে প্রতিবছর। বাধ্য হয়ে মালদা থেকে পরিবার সমেত জমিদার বাবু ১৮২৫ সালে ধুলিয়ানে চলে আসেন আর তাদের নতুন ঠিকানা হয় মুর্শিদাবাদ। নির্মাণ করা হয় জমিদারবাড়ির দালানকোঠা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সঙ্গে সপরিবারে আসেন জমিদারবাড়ির প্রতিষ্ঠিত দেবী দুর্গাও। সেই থেকে জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজো হচ্ছে মূর্শিদাবাদের ধুলিয়ানে।
ভারত স্বাধীনতা লাভ করার আগে রাঘবেন্দ্র রায়ের পরিবার ছিল জমিদার। বারবার গঙ্গা ভাঙ্গন ও বন্যায় বিপর্যয়ের মুখে পড়া বিপর্যস্ত পরিবারের জন্য মালদা থেকে চলে এসে মুর্শিদাবাদে কাঞ্চনতলা বা ধুলিয়ানে জমিদার বাড়ি নির্মাণ করা হয়। এই রায় বাড়ির পুজোয় এখনও প্রাচীন সময়ের পূর্ব পূরুষের রীতি অনুযায়ী চলে আসছে। দুর্গাপুজোয়, দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ ছাড়া ভাঙন রুখতে দেবী গঙ্গা সহ মোট এগারোজন দেবী ও এগারোজন দেবতার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে হয় পুজো।
অন্যত্র যেমন চার ছেলে মেয়ে সমেত পূজিত হন দেবী দুর্গা, এখানেও তেমনি। তবে এই জমিদার বাড়ির পুজোয় পূজিত হন আরও ষোলোটি দেবদেবীর মূর্তি। এঁদের মধ্যে সকলের ওপরে রয়েছেন মহাদেব। মহাদেবের দুপাশে থাকেন নন্দী ও ভৃঙ্গি। তাঁরও ওপরে অধিষ্ঠিত দেবী গঙ্গা। দেবীর বামদিকে থাকেন বিজয়া এবং নরসিংহ। দেবীর সঙ্গেই থাকেন রাম, লক্ষ্ণণ। থাকেন বিষবাহন। আরও সাথে আরও কিছু প্রতিমাও থাকে। প্রাচীন রীতি মেনে প্রতিমার তৈরীর কাজ শুরু হয় রথের দিন।
কৃষ্ণ নবমীর দিন ঘট ভরে দুর্গা পুজো শুরু করা হয়। দশমীর দিন রীতিমেনে বাড়ির মূল প্রবেশদ্বার বাইরের কারোর জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিবারের কোনো সদস্য ছাড়া বাড়ির ভিতরে বহিরাগতদের প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ। বিসর্জন হয় দশমীতে। বিসর্জনের দিন ঢাক বাজান বাড়ির পুরুষেরা। সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন বাড়ির মহিলারা। কাঁধে করে দেবী মূর্তিকে নিয়ে গিয়ে গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া হয়। পরিবারের ঐতিহ্য মেনে এখনও আয়োজিত হয় বাইচ প্রতিযোগিতার। এক সময় ধুলিয়ান জমিদার বাড়ির বাইশ পুতুলের পুজো দেখতে পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ড থেকে পর্যন্ত মানুষ আসতেন। এখন জৌলুস অনেকটাই কমেছে। তবে অঞ্চলের একবার হলেও দর্শন করে যান রায় বাড়ির দেবী মা-কে।