Dainik Sangbad – দৈনিক সংবাদ
Image default
ট্রেন্ডিং

রোগীর প্রাণ বাঁচাতে বন্যায় প্রায় আধ কিলোমিটার সাঁতরে হাসপাতালে পৌঁছলেন দুই চিকিৎসক

হাসপাতাল না জলে দাড়িয়ে থাকা একটা মাথা তোলা বাড়ি বোঝা দায়। গত কয়েকদিন ধরেই টানা বর্ষণে ডুবেছে দক্ষিণবঙ্গের বহু জেলা। বৃষ্টি কিছুটা কমলেও জল যন্ত্রণা কমার নাম নেই। তার উপর ডিভিসি (DVC) থেকে জল ছাড়ায় অন্যান্য জেলার মত ডুবে গিয়েছে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর (Udaynarayanpur)। সাথে সাথে ডুবে গিয়েছে এই অঞ্চলের স্টেট জেনারেল হাসপাতালের চারপাশের এলাকাও। যতদূর চোখ যায়, শুধুই জল আর জল। এমার্জেন্সি, আউটডোর এবং হসপিটাল ওয়ার্ডের বাইরে জল কার্যত থৈথৈ করছে, জল ঢুকেছে হাসপাতাল সংলগ্ন স্টাফেদের কোয়াটার, ডাক্তার ও নার্সের কোয়াটারেও।কোথাও জল হাঁটুর উপরে আবার কোথাও কোমর সমান জল বা তার উপরে জল দাড়িয়ে। চরম সংকটে রোগীরা। এমন সময় এক সংকটাপন্ন রোগীর প্রাণ বাঁচাতে এক অনন্য নজির স্থাপন করলেন হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের চিকিৎসকরা। জরুরী অস্ত্রপাচার করতে প্রায় ৪০০ মিটার দূরত্ব কোমরের উপরে থাকা জল সাঁতরে পার করে হাসপাতালে পৌঁছলেন দুই চিকিৎসক তারক দাস , প্রভাস দাস এবং এনাস্থেসিস্ট ডা. অশোক খাঁড়া।

কিছুদিন আগেই এই উদয়নারায়ণপুরে বন্যার জলে ডুবে মারা গেছেন এক কিশোরী। শুধু তাই নয় হাসপাতালের কর্মীরা জানিয়েছেন, হাসপাতাল চত্বরে জমা জলে ঘুরে বেড়াচ্ছে সাপ। জল জমার কারণে সাপের উপদ্রব বাড়ছে। রোগীরাই এই হাসপাতালে পৌঁছতে যথেষ্ট ভয়ভীত। সেখানে নিজেদের কর্তব্য না ভুলে এই ভাবে হাসপাতালে পৌঁছে বছর ৪৮ এর দীপালী মালিকের জরায়ুর টিউমার তৎক্ষণাৎ অপারেশন করে তার প্রাণ বাঁচিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন এই চিকিৎসকরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪৮ বছর বয়সী দীপালী মালিকের জরায়ু থেকে অনেক দিন ধরেই রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। বয়সজনিত কারণে দীপালীদেবীর ঋতুস্রাব বেশ কিছুদিন আগেই বন্ধ হয়েছে। তাই প্রায় ১ মাস পরেও রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় চিন্তায় পড়েন হাওড়ার জয়নগরের বাসিন্দার পরিবার। উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন দিপালী দেবীকে। তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন অতিকায় এক টিউমার জন্মেছে তাঁর জরায়ুতে।

সেই টিউমারটিই অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ এমন বৃষ্টি আর জল জমে ঘটে বিপত্তি। প্রায় এক ঘন্টার এই হিসটেরেকটমি অস্ত্রোপচারের ইমার্জেন্সীতে দরকার ছিল। হিসটেরেকটমি অপারেশনের মাধ্যমে শরীরের ইউটেরাস বা জরায়ু বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। দিপালীদেবির শরীরে ছোটোখাটো একটি বেলের আকারের টিউমারটির ওজন প্রায় ৫০০ গ্রাম। তাই সেটি অপারেশন করার দরকার ছিল দ্রুত। অপেক্ষা করেননি ডাক্তাররা। সাঁতরে পৌঁছন তারা।

আর বর্তমান সময়ে যেখানে চিকিৎসক নিগ্রহ গা-সওয়া, রোগীর কোনো কারণে মৃত্যু হলেই তাঁদের পরিবারের লোকজনের হাতে জুটছে মার ধর। সেই সময়ই সাঁতরে এসে অপারেশন করার এই ঘটনায় চিকিৎসকদের কুর্ণিশ জানিয়েছেন দীপালীদেবীর পরিবার।

Related posts

বিয়ের মঞ্চে আগে নাচা নিয়ে কনেপক্ষ আর বরপক্ষের মধ্যে তুলকালাম! পরিণতি হল ভয়াবহ

News Desk

‘দামে কম, মানে ভালো’, রাতারাতি সোশ্যাল-জ্বরে কাকলি ফার্নিচার প্রচারের আলোয়

News Desk

কাঠের আসবাবে ঘুণ ধরছে? যত্ন নেবেন কী ভাবে

News Desk