বাঙ্গালী হিন্দু সমাজে প্রতিবছর জ্যৈষ্ঠ মাসে পালিত হয় জামাই ষষ্ঠী। বিবাহিত মেয়ে জামাই কে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানোর রীতি রয়েছে এই বিশেষ দিনটি তে। জামাইকে প্রভূত আদর আপ্যায়ন করে নানান পদ সহযোগে গরমের আম, কাঠাল, লিচু ইত্যাদি যত্ন করে খাওয়ায় তার শাশুড়ি। তবে যুগ পাল্টেছে। এখন অনেক শাশুরীই নিজ হাতে নানান পদ রান্না করে উঠতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে বাড়ির বদলে হোটেল রেস্তোরাঁতেই পালিত হচ্ছে এই ষষ্ঠী। তবে আন্তরিকতায় ভাঁটা পড়েনি একটুও।
সাধারণ বাঙালির মধ্যে এই দিনটি ঘিরে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের থেকে বেশী সামাজিক রীতিনীতির দেখা মেলে। বলা যায় জামাই ষষ্ঠী বাঙালির সামাজিক এক উৎসব।
কিন্তু জানেন কি এই জামাই ষষ্ঠী নিয়ে প্রচলিত আছে কি লোককথা। পরে নিন।
কথিত আছে, কোনো এক কালে এক গৃহবধূ বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে সমস্ত মাছ চুরি করে খেয়ে নিত। আর মাছ চুরির দোষ বারবার বিড়ালের ওপর দিত। বিড়াল মা ষষ্ঠীর বাহন হওয়ায় এতে মা ওই গৃহবধূর উপর কূপিত হন। একদিন তার সন্তান হারিয়ে যায়। ওই গৃহবধূ নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে আর নিজের সন্তানকে ফিরে পেতে সে বনে গিয়ে দেবী ষষ্ঠীর আরাধনা শুরু করে। তার আরাধনায় মা ষষ্ঠী সন্তুষ্ট হলে সেই বনের মধ্যেই ওই গৃহবধূ তার সন্তানকে ফিরে পায়। এই কারণে জামাই ষষ্ঠীর অন্য নাম অরণ্যষষ্ঠী। এরপর তার মাছ চুরির কথা জানাজানি হতে শ্বশুর-শাশুড়ি তার বাপের বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। ফলে ওই গৃহবধূর মা-বাবা নিজেদের মেয়েকে দেখতে একবার ষষ্ঠীপূজার আয়োজন করে এবং সেই ষষ্ঠীপুজোর দিন শ্বশুরবাড়িতে আসার জন্য জামাইকে নিমন্ত্রণ করেন। পুজোর দিন নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে সস্ত্রীক জামাই হাজির হলে মেয়েকে দেখে তার মা-বাবার মনে আনন্দ আর ধরে না। বলা হয় এর থেকেই জামাই ষষ্ঠীর দিন মেয়ে জামাই কে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানোর রীতি রয়েছে।
প্রতি বছর জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা ষষ্ঠীর দিনটিকে জামাই ষষ্ঠী হিসেবে পালন করা হয়। যেখানে মেয়ে জামাইকে নিমন্ত্রণ করা হবে এবং তাঁদের আদর আপ্যায়ন করা হবে। পাশাপাশি এই দিন মা ষষ্ঠীর পুজোও করা হয় যাতে মেয়ে-জামাই শীঘ্রই সন্তানের মুখ দেখতে পান। যে পরিবারে সদ্যোবিবাহিতা কন্যা আছে, সে পরিবারে এ পার্বণটি মহাসমারোহে পালন করা হয়ে থাকে।