মঙ্গলবার কানপুরের কেবেরা-২ যাদব মার্কেটে বাড়িতে এক বৃদ্ধ দম্পতির রক্তে ভেজা মৃতদেহ পাওয়া গেছে। মুন্না লাল উত্তম (বয়স ৬১) ও তার স্ত্রী রাজদেবীকে (বয়স ৫৫) কোনো অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এই সময় ওই দম্পতির মেয়ে কোমল ও ছেলে অনুপ বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন।
এই চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনার তদন্তে নিয়োজিত পুলিশ ১০ ঘণ্টার মধ্যে হত্যা মামলাটি উদঘাটন করে। পুলিশের দাবি, বৃদ্ধ দম্পতিকে খুন করেছে তাদের নিজের মেয়ে। ঘটনাটি ঘটাতে তিনি তার প্রেমিকের সাহায্য নেন। পুলিশ দুজনকেই গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দম্পতি মেয়ের সঙ্গে তার প্রেমিকের বিয়ের বিরোধিতা করছিলেন। এছাড়াও, বাবার কোটি টাকার সম্পত্তি ছিল, যা মেয়ে ও তার প্রেমিক দখল করতে চেয়েছিল, তাই মেয়ে নিজেই বাবা-মাকে হত্যা করেছে।
ফলের রসে মাদক মিশিয়ে প্রথমে অচেতন করে:
পুলিশ জানায়, প্ল্যান করে সোমবার রাতে মেয়ে তার বাবা-মা ও ভাইকে নেশাজাতীয় দ্রব্য মেশানো জুস পান করিয়েছিল। সবাই অজ্ঞান হয়ে গেলে সে তার প্রেমিককে ডেকে তারপর বাবা-মাকে গলা কেটে হত্যা করে। ঘটনার পর প্রেমিকা চলে গেলে তিনি কান্নাকাটি, চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন। শোরগোল শুনে বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ঘুমন্ত ভাই এসে জিজ্ঞাসা করলে জানান, তিনজন মুখোশধারী দুষ্কৃতী এসে বাবা-মাকে হত্যা করেছে।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত তরুণীর ভাই অনুপ পুলিশকে আরও জানায়, রাতে তার বোন পান করার জন্য জুস দিলেও তার স্বাদ ভালো লাগেনি। তাই সে জুস পান করেনি। কিন্তু তাও কিছুক্ষণ পর তার হুশ ছিল না।
দুটি ভিন্ন কক্ষে মৃতদেহ পাওয়া গেছে:
পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আনন্দ প্রকাশ তিওয়ারি জানান, বাড়ির নিচতলায় আলাদা আলাদা ঘরে বৃদ্ধ দম্পতির মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এর আগে পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে জিজ্ঞাসাবাদে দম্পতির মেয়ে কোমল বলেছিলেন, “বাবা রুমে ঘুমাচ্ছিলেন। আমি মা’র সাথে মা’র ঘরে ঘুমাচ্ছিলাম। ভাই দোতলায় ঘুমাচ্ছিলেন। কখন এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তা জানা যায়নি। আওয়াজ শুনে চোখ খুললে দেখেন তিনজন মুখোশধারী লোক বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। তবে পুলিশ সকালেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে খুনিরা ওই দম্পতিকে আগে থেকেই চিনত।
যে কারণে পুলিশের সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়:
যে বাড়িটিতে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি মাত্র ৪৭ বর্গমিটারে স্থানে। স্বামী-স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা করা হলেও বাড়িতে উপস্থিত ছেলে-মেয়েরা বিষয়টি জানতে পারেনি বলে বিশ্বাস করতে পারেনি পুলিশ। আরো প্রশ্ন ওঠে মেয়ে মায়ের সাথে শুয়েছিল। সে কখন উঠল এবং কখন স্বামীর কাছে গেল? মুখোশধারী খুনিরা ঘরে ঢুকলে তিনি আওয়াজ করলেন না কেন? পুলিশের এসব প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি কোমল।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেল প্রেমিককে:
মৃতদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ যখন তদন্ত শুরু করে, তখন সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় গভীর রাতে বাড়িতে ঢুকছেন এক যুবক। কেউ একজন ভেতর থেকে দরজা খুলে দিলে তিনি নক না করেই প্রবেশ করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। এ সময় তিনি মুখ ঢেকে রাখেন। পুলিশ দেখে বাড়িতে যাওয়ার সময় তার হাতে কিছুই ছিল না, কিন্তু ফেরার সময় তার হাতে একটি ব্যাগ ছিল। যুবকটি ছিল মেয়েটির প্রেমিক।
মেয়ের দুই হাতে আঘাতের চিহ্ন:
কোমলের দুই হাতে আঘাতের চিহ্ন পেয়েছে পুলিশ। তদন্তে তার দুই হাতেই রক্ত পাওয়া গেছে। প্রেমিকের হাতেও রক্ত পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, ঘটনার পর রাতেই মেয়েটি নিজের কাপড় ধুয়ে ফেলেছিল, তদন্তে ওই পোশাকে রক্তের দাগ পাওয়া গেছে।
এর আগে পুলিশ অনুপের শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে সন্দেহ করে তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। আসলে স্ত্রী সোনিকার ভাইদের ওপর বাবা-মাকে খুনের সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন অনুপ। তিনি বলেছিলেন যে ২০১৭ সালে সোনিকার সাথে তার বিয়ে হয়েছিল, কিন্তু মাত্র এক সপ্তাহ পরে, সোনিকা তার বাড়িতে ফিরে যায় এবং আর ফিরে আসেনি। তারপর থেকে উভয়ের বিবাহবিচ্ছেদের মামলা আদালতে চলছে। সে পুলিশকে বলেছিল যে সোনিকার বড় ভাই সুরেন্দ্রও অনুপের পরিবারের সদস্যদের কাছে ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়েছিলেন। পাশাপাশি টাকা না দিলে পুরো পরিবারকে মেরে ফেলব বলেও হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জানা যায় ছেলের শ্বশুর বাড়ি নয় মেয়ের প্রেমিকই বৃদ্ধ দম্পতির মৃত্যুর কারণ। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত মুন্নালাল অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে অবসরপ্রাপ্ত এবং মৃত রাজদেবী একজন গৃহিণী ছিলেন।