সরল মনের মানুষ চিত্তরঞ্জন মাহাতোর কাছে এক মহিলার ফোন এসেছিল। পুরুলিয়ায় বসবাস করেন তিনি । ওনার বাড়ি পুরুলিয়ার কেন্দা থানা এলাকার কুদা গ্রামে। ফোনে চিত্তরঞ্জন বাবুকে ওই মহিলা প্রথমে নিজের বাড়িতে যদি মোবাইল টাওয়ার বসানো হয় তবে তাতে কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে, সেই সব বোঝান। এমনকি তাকে এও বলা হয় যে মোবাইল টাওয়ার বসালে তিনি একদিকে যেমন টাকা পাবেন , তার পাশাপাশি চাকরিও হবে তাঁর ছেলের। মাস গেলে ৬০০০ টাকা পাবেন। আর চিত্তরঞ্জন বাবুর জন্য পাতা এই ফাঁদে তিনি পরেও যান। তাকে এই মোবাইল টাওয়ার বসানোর কথা বলে প্রায় লাখ চল্লিশেক টাকা নিয়ে নেওয়া হয়। সিয়াইডি এই ঘটনার সাথে যুক্ত মূল অভিযুক্তদের মধ্যে ২০ জন কে গ্রেফতার করেছে বৃহস্পতিবার দিন। পুরুলিয়া আদালতে আজকে তাদের তোলা হয়েছিল এবং বিচারক ওই ধৃতদের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন ১৪দিনের।
সূত্র থেকে জানা গেছে যে ওই ভন্ড সংস্থা নিজেদের ফাঁদ পাততো কলকাতা ও কলকাতা সংলগ্ন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা থেকে। আর এরকম ভাবেই চাকরি ও টাকা দেওয়ার ফাঁদ পেতে প্রচুর লোকের সাথে প্রতারণা করেছে। শুধুমাত্র প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে লক্ষ লক্ষ টাকা লুটেছে এই ভন্ডরা। ২০১৩ সালে পুরুলিয়ার চিত্তরঞ্জন মাহাতো প্রতারকদের পাতা এই ফাঁদেই পা দেন। প্রায় চল্লিশ লক্ষ টাকার প্রতারণা করা হয়েছে তাঁর থেকে বলে অভিযোগ। প্রথমে চিত্তর়ঞ্জন বাবুকে বিভিন্ন রকমের লোভ দেখানো হয়। সেই ফাঁদে একবার পা দেওয়ার থেকেই শুরু হয় এই প্রতারণা। এমনটা বলা হয় যে লাখ খানেক টাকা লাগবে টাওয়ার বসাতে। সেই সময় নগদ টাকা দিতে চান চিত্তরঞ্জন বাবু, কিন্তু প্রতারকরা দাবী করেন , নগদ টাকা নয়, চিত্তরঞ্জন বাবুকে চেক দিতে হবে। তাঁর পাঁচটি ব্ল্যাঙ্ক চেক দফায় দফায় ভাঙিয়ে নেয় প্রতারকরা। ওই চেক গুলির মধ্যে কোনোটায় ৩৭ হাজার, কোনওটিতে ১ লাখ ৪০ হাজার, আবার কোনওটিতে ১ লাখ ৩৫ হাজার, আবার কখনও ১ লাখ ৮০ হাজার।
এখানেই সব কিছু শেষ হয়না। প্রতারণার সূচনা ছিল সবে। পলিসি করা হবে বলে আরও টাকা নেওয়া হয় তাঁর থেকে। সেই মতো বিভিন্ন অঙ্কের মোট ১৩ টি পলিসি করানো হয় চিত্তরঞ্জন বাবুকে দিয়ে ছেলের নামে, বউয়ের নামে, নিজের নামে। এই প্রতারণা চলতে থাকে ২০১৩ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত। বিষয়টি যখন চিত্তরঞ্জন বাবু বুঝতে পারেন, অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে ততক্ষণে। কেন্দা থানায় পৌঁছে সাথে সাথে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। সিআইডি এই অভিযোগের তদন্ত করছিল। এই ঘটনায় গতকাল রাতে সল্টলেক থেকে সিআইডি এই চক্রের মূল পান্ডা সহ ২০ জনকে গ্রেফতার করে। এই চক্রের আসল মাথা সন্দীপ বিশ্বাস। প্রতারণা সহ একাধিক মামলা ধৃতদের বিরুদ্ধে রুজু করা হয়েছে। আজ জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ১৪ দিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দেন।