লাল রঙের জামা, লাল টুপি, ধবধবে সাদা চুল আর সাদা দাড়ি— ক্রিসমাস শুরু হলেই বল্গা হরিণে টানা স্লেজ গাড়ি চেপে বেরিয়ে পড়েন তিনি। সাথে থাকে ঝোলাভর্তি উপহার। সারা পৃথিবী জানে ক্রিসমাস মানেই সান্তা ক্লজ। কিন্তু কে এই সান্তা ক্লজ? শুধুই কি কল্পকাহিনী তে এর স্থান নাকি বাস্তবে সত্যিই আছে সান্তা ক্লজ। এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন নি এমন মানুষ বোধহয় নেই।
প্রচলিত কথক অনুসারে ক্রিসমাসের রাতে সান্তা ক্লজ আসেন শিশুদের মনের ইচ্ছাপূরণ করতে। কিন্তু জানেন কি কোথা থেকে উৎপত্তি হল এই সান্তা ক্লজের।
সান্তা ক্লজের কাহিনীর পেছনে আছে এক দীর্ঘ ইতিহাস। লাল জামা, লাল টুপি পরা সাদা ধবধবে দাড়ি- গোঁফ-ওয়ালা এই ব্যক্তির বিষয়ে খোঁজ পাওয়া যায় খ্রিষ্টীয় ৩ শতকে। সেই সময় সেন্ট নিকোলাস নামক এক সন্ন্যাসী বা মঙ্কের। ২৮০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ এখন যেখানে তুরস্কের সেখানে তাঁর জন্ম হয়েছিল বলে মনে করা হয়। তিনি ছিলেন ভীষণ সৎ আর দয়াশীল। তাকে সকলে পছন্দ করত। প্রচুর সম্পদের অধিকারী হওয়া সত্বেও এই ব্যক্তি সবসময় সাহায্য করতেন গরীব ও অসহায় মানুষদের।
তার এই মহানুভবতার বিষয়ে চারিদিকে খবর ছড়িয়ে পড়লে রেনেসাঁ অবধি ইউরোপে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন সেন্ট নিকোলাস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আঠারোশো শতকের শেষের দিকে পরিচিতি পেতে শুরু করেন সেন্ট নিকোলাস।
ডাচ ভাষায় সেন্ট নিকোলাসকে সিন্টার ক্লাস নামে ডাকা হত। এটি আসলে সেন্টনিকোলাসের ডাচ উচ্চারণ। সেই সিন্টার ক্লাস থেকেই সান্তা ক্লজ নামটি এসেছে। ক্রিসমাসে শিশুদের মধ্যে উপহার দেওয়ার রীতি আসে উনিশশো শতকের গোড়ার দিকে। যখন ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে নানান দোকানে দেওয়া হত বিজ্ঞাপন, জিনিস পত্র কেনাকাটার জন্য যেখানে সান্তা ক্লজের ছবিও একই সাথে ছাপা হতো। এই ভাবেই আস্তে আস্তে জনপ্রিয়তা পায় সান্তা ক্লজ।
প্রসঙ্গত, আজকের দিনে আমরা যে সাজ পোশাক পরা সান্তা ক্লজ কে দেখি, তা কিন্তু এসেছে, An Account of a Visit from St. Nicholas- নামক একটি কবিতা থেকে। ১৮২২ সালে ক্লেমেন্ট ক্লার্ক মুর নামক এক কবি ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে এই কবিতাটি লেখেন। লাল জামা এবং কালো বেল্ট, সাদা বর্ডার দেওয়া লাল টুপি পরা সাদা দাড়ি গোঁফওয়ালা এক ব্যক্তি ৮টি হরিণ টানা স্লেজ গাড়িতে আকাশ পথে এসে শিশুদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে উপহার বিতরণ করছে- এমনই এক বর্ণনা ছিল তার সেই কবিতায়। আমেরিকায় এই কবিতা খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।
এইভাবে সারা বিশ্ব জুড়ে ক্রিসমাসের আগের রাতে বাচ্চারা ঝোলায় রঙিন মোজা যা উপহারে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। আস্তে আস্তে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় রীতির জায়গা পেয়েছে। তবে এটি গল্প-কাহিনি হলেও বাচ্চারা আজও বিশ্বাস করে, সত্যিই ক্রিসমাসের আগের রাতে সান্তা আসেন এবং তাদের উপহার দেয়।