হিন্দু শাস্ত্রে সূর্যের ধনু রাশিতে গোচরকে শুভ মনে করা হয় না। সূর্যের রাশি পরিবর্তনকে সংক্রান্তি বলা হয়। ১৬ ডিসেম্বর নিজের রাশি পরিবর্তন করে সূর্য। এ সময় ধনু রাশিতে গোচর করে গ্রহের রাজা। এই ধনু সংক্রান্তি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত শুভ কাজ, যেমন- এংগেজমেন্ট বিবাহ, উপনয়ন, গৃহপ্রবেশ ইত্যাদি বন্ধ হয়ে যায়। মকর সংক্রান্তির সূচনার পর ফের শুভ কাজ করা যেতে পারে। এই একমাসের সময়কে মলমাস বা খরমাস বলা হয়।
খরমাসের কাহিনি
সংস্কৃতে গাধাকে খর বলা হয়। পুরাণ অনুযায়ী সাতটি ঘোড়ার রথে সওয়ার হয়ে লাগাতার ব্রহ্মাণ্ডের পরিক্রমা করেন সূর্য।
মার্কণ্ড পুরাণ অনুযায়ী, সূর্যদেব তার সাতটি ঘোড়ায় চড়ে ব্রহ্মাণ্ডের চারিদিকে ঘুরে বেড়ান। এই প্রদক্ষিণের সময় সূর্যের রথ কোথাও থামে না। মনে করা হয়, সূর্য থামলেই জন-জীবনকে স্থির হয়ে যাবে। তবে তাঁর রথের সাতটি ঘোড়া ক্রমাগত ছুটে যাওয়ার কারণে তৃষ্ণার্ত ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাদের অবস্থা দেখে সূর্যের মনে করুণার সঞ্চার হয়। তখন তিনি সাতটি ঘোড়াকে পুকুরের ধারে নিয়ে যান। কিন্তু তাঁর মনে পড়ে যে, রথ থেমে গেলে ব্রহ্মাণ্ডে সমস্যা সৃষ্টি হবে। সে সময় পুকুরের ধারে দুটি গাধা দেখে তিনি নিশ্চিন্ত হন। সাতটি ঘোড়াকেই সেখানে জলপান ও বিশ্রামের জন্য ছেড়ে দেন এবং ওই দুই গাধাকে নিজের বাহন করে নেন। কিন্তু গাধা ঘোড়ার মতো ছুটতে পারে না। কোনও মতে ধীরগতিতে একমাস গাধার রথে ব্রহ্মাণ্ডের পরিক্রমা করেন সূর্য। এই এক মাসে ঘোড়ারা বিশ্রাম করে নেয়। এ ভাবে একটি সৌর বছরে একটি সৌর খরমাস থাকে। ফলে এই সময় কোনও কাজ শুভ হয় না।
শুভ কাজ নিষিদ্ধ
জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে বৃহস্পতি হল ধনু রাশির অধিপতি। নিজের রাশিতে বৃহস্পতির প্রবেশ কোনও ব্যক্তির জন্য শুভ নয়। এমনটা ঘটলে মানুষের জন্মকুণ্ডলীতে সূর্য দুর্বল হয়ে পড়ে। এই রাশিতে সূর্য মলিন হওয়ার কারণে একে মলমাসও বলা হয়। কথিত আছে, মলমাসে সূর্যের প্রকৃতি ক্রুদ্ধ হয়। সূর্যের দুর্বল অবস্থানের কারণে এই মাসে শুভ কাজে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
কি কি মানা
এই সময়ে বিবাহ নিষিদ্ধ। এই সময়ে বিয়ে হলে মানসিক ও শারীরিক সুখ পাওয়া যায় না। এই সময়ে নতুন বাড়ি নির্মাণ এবং সম্পত্তি ক্রয় নিষিদ্ধ। এই সময়ে নির্মিত বাড়িগুলি সাধারণত দুর্বল এবং তাদের থেকে বসবাসের আনন্দ পাওয়া যায় না। নতুন ব্যবসা বা নতুন কাজ শুরু করবেন না। মালমাসে একটি নতুন ব্যবসা শুরু করা আর্থিক অসুবিধার জন্ম দেয়।