প্রচলিত বিশ্বাস যে স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল– এই তিন নিয়েই তৈরী এই বিশ্ব। আমাদের কল্পনায় স্বর্গ এর অবস্থান উপরে যেখানে বসবাস দেবদেবীদের বলে বিশ্বাস। মর্ত্য হল এই পৃথিবী যেখানে আমরা বসবাস করি, আর পৃথিবীর অভ্যন্তরে পাতাল। মাটির নিচের মানুষ। কিন্তু এই সকল বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের কল্পনা। কিন্তু যদি শোনেন যে এই দেশেই আছে এই সত্যিকারের পাতালপুরী।
ভারতের বেশ কিছু গ্রাম রয়ে গিয়েছে, যা বাস্তবিকই মাটির নীচে অবস্থিত। একরকম এই সব গ্রামকে ‘পাতাল’ এ অবস্থিত বললে ভুল হয় না।
এই গ্রামের বাসিন্দারাও যেন পাতালেরই বাসিন্দা। বাইরের পৃথিবীর বিশেষ কোনো খবরই রাখে না তারা। পৃথিবীর কত কি ঘটে গেলো এই বিষয়ে তাদের খুব একটা হেলদোল নেই। এমনকি সারা বিশ্ব তোলপাড় করে দিয়েছে যে করোনা মহামারি তার খবরও পৌঁছায়নি সেই সব গ্রামে।
এতটা পরে নিশ্চয় অবাক হয়ে ভাবছেন এই গ্রাম কোথায়? তাহলে জেনে নিন এর খোঁজ। ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের চিনদোয়ারা জেলায় শহরাঞ্চল থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে দুর্গম সাতপুরা পাহাড়। সেই খানেই এই রকম কয়েকটি গ্রামের অবস্থান।
চারদিকে পাহাড় আবৃত। তার মাঝের এম দুর্গম উপত্যকায় ১২টি ছোটো ছোট গ্রাম। বলা যায় ছোট ছোট গ্রাম নিয়ে গঠিত একটি গ্রামপুঞ্জ। সর্বসাকুল্যে লোকসংখ্যা তিন হাজারেরও কিছু কম। গ্রামগুলোতে আর চারপাশে এত সুবিশাল আর ঘন গাছপালা দিয়ে ঢাকা রয়েছে যে বেশিরভাগ গ্রামের বহু স্থানে দিনের পর দিন সূর্যের আলো পৌঁছায় না। ফলে পুরো অঞ্চলটি থাকে দিনেও আঁধারে ঘেরা, স্যাঁতসেঁতে। গ্রামটির পরিবেশ এই সব কারণে রহস্যময় হয়ে উঠেছে। উপত্যকাটি মাটির নিচু অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় গ্রামগুলি যেন প্রায় পাতালপুরী। গ্রামপুঞ্জ গুলিতে মিলিত ভাবে ডাকা হয় পাতালকোট।
এই গ্রামগুলিতে ভারিয়া উপজাতির মানুষ বসবাস করেন। তারা এখানে কুঁড়েঘরে বাস করে। পাহাড় ও প্রকৃতিকে কেন্দ্র করে তাঁদের জীবনশৈলী। নিজেদের খাদ্যের প্রয়োজনীয় যেটুকু তারা তা নিজেরাই উৎপাদন করে নেয়। শুধু লবণ আর তেল কিনতে বাইরে আসেন এরা। নিজেদের চিকিৎসা নিজেরাই করে এখানকার গ্রামবাসীরা। বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগে খুব একটা আগ্রহ নন এরা। নিজেদের স্থানীয় সংস্কৃতি যথেষ্ট খুশি তারা। এখনও নিজেদের সাংস্কৃতিক নিজস্বতা বজায় রেখেছেন তাঁরা।