দূর থেকে দেখলে মনে হয় গভীর নীল সমুদ্রের মাঝে যেন একটা সামরিক জাহাজ। কিন্তু আদতে এটি তা নয়। তাহলে এটা কী? এটি একটি পরিত্যক্ত দ্বীপ। জাপানিজ যুদ্ধের সাথে দেখতে মিল রাখার জন্য গুঙ্কঞ্জিমা (অর্থ ব্যাটলশিপ দ্বীপ) নামেও পরিচিত। পৃথিবীর মধ্যে ৫০৫টি জনমানব শূন্য দ্বীপের মধ্যে হাশিমা দ্বীপ অন্যতম। অথচ সম্পূর্ন দ্বীপ জুড়েই রয়েছে প্রচুর বিল্ডিং। কিন্তু নেই কোনো মানুষ জনের দেখা। নাগাসাকি শহরের উপকূল থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার (৯ মাইল) দূরে অবস্থিত এই শহরটি। এই দ্বীপটিকে ভৌতিক দ্বীপ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন মানুষের প্রবেশ বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি আবারও মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে এই দ্বীপ। প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত এই দ্বীপ হাশিমা অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকদের জন্য এবং ইতিহাস প্রিয় মানুষদের জন্য একটি পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
কিন্তু একসময় এখানে ছিল প্রচুর মানুষের বাস। ১৮৮৭ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত হাশিমা দ্বীপটি ছিল ঘনবসতিপূর্ন। আসলে এই দ্বীপে প্রচুর কয়লা খনি থাকায় এটিকে ঘিরে অনেক শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছিল। ১৮৯০ সালে এখানে কয়লা ঘিরে প্রচুর শিল্প-কারখানা গড়ে উঠল। ১৯১৬ সালে এখানে জাপানের সবচেয়ে বৃহৎ একটি ৯ তলা কনক্রিট স্টোরেজ ভবন গড়ে উঠে। এই বিল্ডিংটি সামুদ্রিক টাইফুনের হাত থেকে দ্বীপ থেকে বাঁচার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। তৈরী হয়েছিল স্কুল, উপাসনা স্থল ইত্যাদি। ১৯৩০ সাল নাগাদ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দ্বীপটি কয়লা উত্তোলনের জন্য একটি বাধ্যতামূলক শ্রম স্থান হিসাবে ব্যবহৃত হত। জনশ্রুতি অনুযায়ী প্রায় ১৩০০ শ্রমিক যারা মূলত কোরিয়ান এবং চীনা, এই দ্বীপে কঠোর পরিশ্রমের কারণে এখানে মারা গিয়েছিলেন। কিন্তু এই দ্বীপে ।
১৯৭০ সাল নাগাদও কয়লাখনিসমৃদ্ধ এই দ্বীপে বসবাস করতেন প্রায় ৫ হাজার মানুষ। তবে ১৯৭৪ সাল নাগাদ খনির থেকে কয়লা তোলা বন্ধ হয়ে যায়। আস্তে আস্তে জনশূন্য হতে থাকে দ্বীপ। এরপর নাগাসাকি কর্তৃপক্ষ অনুষ্ঠানিক ভাবে সবকটি খনি বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে বহুদিন দ্বীপটি জনশূন্য অবস্থায় আছে। এই কারণে দ্বীপটিকে অনেকে ভূতুরে দ্বীপও বলে থাকে। এইভাবে ৩৫ বছর মানুষের জন্য বন্ধ থাকার পর দ্বীপটি পুনরায় পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে এটিকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করা হয়।