কার্ত্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে দীপান্বিতা কালীপুজো পালিত হয়। প্রধানত শাক্ত সম্প্রদায় কালীপুজো করে থাকে। তন্ত্র অনুসারে, কালী দশমহাবিদ্যা নামে পরিচিত দশজন প্রধান তান্ত্রিক দেবীর প্রথম আরাধনা করে থাকেন। শাক্ত মতে, কালী বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আদি কারণ।
হিন্দুদের অন্যতম আরাধ্যা দেবী কালিকা বা কালী মূর্তিতে দেবীকে নগ্নিকা হিসেবে দেখা যায়। দেবীর এই মূর্তি অনেকের কাছে কৌতুহলের কারণ। কেন এই রহস্য ঘিরে আছে কালীমূর্তিকে? বাংলার প্রায় সব দেবদেবীই বসন পরিহিতা। সালঙ্কারা। মা কালীকেও বিভিন্ন অলঙ্কারে সাজানো হয়। তবে বরাবর তাঁর নগ্নিকা রূপই পূজ্য। প্রসাদী ভক্তিগীতিতে তাই মাকে বসন পরার আর্তি শোনা যায়। কেন দেবী নগ্নিকা রূপে পূজিত হন! জেনে নিন মা কালীর রূপের তাৎপর্য।
দেবী চতুর্ভুজা, তাঁর ডান হাতে রয়েছে বরাভয় মুদ্রা ও নীচের হাতে রয়েছে আশীর্বাদ মুদ্রা। এই দুই মুদ্রার অর্থ হয় দেবী তাঁর সন্তানদের রক্ষা করেন আবার আশীর্বাদও করেন। অস্ত্র হিসেবে দেবীর হাতে রয়েছে তরবারি। এর অর্থ দুষ্টের দমনে দেবী যেমন রণমূর্তি ধারণ করতে পারেন আবার সন্তানের রক্ষার্থে তিনি মমতাময়ী মা।
‘কাল’ থেকেই কালী শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। ‘কালী’ শব্দটি ‘কাল’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ। কাল শব্দের অর্থ হল সময়। প্রকৃত অর্থে কাল-কে কলন করেন যিনি তিনিই কালী। দেবী ত্রিনয়ন সম্পন্না। তার ত্রিনয়ন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের পাপ বিনাশকারী। ত্রিনয়নের মাধ্যমে দেবী যেমন অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দর্শন করেন, তেমনই সত্য, শিব ও সুন্দরকে প্রত্যক্ষ করেন। দেবীর ডানদিকের উপরের হাতে বরাভয় মুদ্রা ও নীচের হাতে আশীর্বাদ মুদ্রা রয়েছে। এর অর্থ, মা তাঁর ভক্তদের যেমন রক্ষা করেন, তেমনই মনোবাঞ্ছাও পূর্ণ করেন। দুষ্টের দমনে মা যেমন রণমূর্তি ধারণ করেন, তেমন আবার তাঁর সন্তানের রক্ষার্থে তিনি মমতাময়ী মা। কালী অনন্তের প্রতীক। একদিকে যেমন বিনাশাকারী, অন্যদিকে তেমন সৃষ্টিকারী। দেবী কালী শক্তির প্রতীক। আর এই চিরশক্তিকে কোনও বসন বা জাগতিক বস্ত্রের আবরণে আবৃত করা যায় না। দেবী তাই নগ্নিকা।