মেলায় বিচ্ছিন্ন পরিবারের বছরের পর বছর অতিবাহিত হওয়ার পর দেখা হয়েছে এমন গল্প প্রায়ই শোনা যায়। এমনই এক ঘটনা সামনে এসেছে মহারাজগঞ্জে। আসলে, কয়েক বছর আগে স্বামী ও স্ত্রীর সম্পর্কের তিক্ততা এতটাই এসেছিল যে দুজনেই আলাদা হয়ে যান। বহু বছর পর আবারও এক হচ্ছেন এই দম্পতি। বিশেষ ব্যাপার হল ২০ বছর আগে বিচ্ছেদ হলেও দ্বিতীয়বার বিয়ে করেননি দুজনেই।
বিয়ের তিন মাসের মাথায় গর্ভবতী অবস্থায় সাংসারিক বিবাদ কে কেন্দ্র করে বাড়ি ছেড়েছিলেন মহিলা। এরপর কেটে গেছে বহু বছর। সম্প্রতি তাদের সাথে কথা হয়েছে। এরপর দুজনেই মোবাইলে কথা বলেন। এইভাবেই দুজনের সম্পর্কের বরফ দ্রুত গলতে শুরু করে। ২০ বছর পর, যখন মহিলাটি তার ছেলেকে নিয়ে তার শাশুড়ির বাড়িতে আবারও ফিরে আসে, তখন স্বামীর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়েছিল। মালা পরিয়ে স্ত্রীকে বরণ করে নেন স্বামী।
কুড়ি বছর আগে দুজনে বিয়ে করেন
ঘটনাটি কুশিনগর জেলার চিতাউনি শহরের। এখানকার বাসিন্দা রামজাস মধ্যশিয়ার প্রথম স্ত্রী মারা গিয়েছিলেন। পরিবারে ছোট দুটি শিশু ছিল। ছেলে প্রতিবন্ধী ছিল। সন্তান লালন-পালন ও সংসার চালাতে আত্মীয়রা রামজাসকে আবার বিয়ে করার পরামর্শ দেন। তখন রামজাসের বয়স প্রায় চল্লিশ বছর।
লোকজনকে বোঝানোর পর তিনি বিয়ের জন্য প্রস্তুত হন। শুরু হয় সম্পর্ক খোঁজার কথা। নেপালের কুসুমহায় মনশা নামের এক নারী রামজাসকে বিয়ে করতে রাজি হন। মনশাও বিবাহিত ছিলেন। সম্পর্কে ফাটল ধরায়, তিনি তার প্রথম স্বামী থেকে আলাদা থাকতে শুরু করেন। রামজাস ও মানশা ২০০২ সালে বিয়ে করেন।
কনে হয়ে শ্বশুর বাড়িতে আসেন মানশা। তিন মাস স্বামীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। অন্তঃসত্ত্বা হলে তিনি তার বাড়িতে চলে যান। এ সময় কোনো কোনো বিষয়ে উভয়ের মধ্যে মতপার্থক্য হয়। রামজাস অনেকবার শ্বশুর বাড়িতে গেছে, কিন্তু স্ত্রী তার সাথে আসেনি।তারপর রামজাস শ্বশুর বাড়িতে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। দুই সন্তানকে লালন-পালন করার পর তাদের বিয়ে হয় এবং পুত্রবধূও আসে।
সময়ের সাথেরামজাস ব্যবসায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মনশাও একটি পুত্র সন্তানের জন্ম ডেট। তিনি শিক্ষিত ছিলেন। গত এক মেলার মধ্য দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর দুই দশকের বিচ্ছেদের অবসানের প্রক্রিয়া শুরু হয়। নেপালের গোপালপুরে খিচড়ি মেলায় গিয়েছিলেন রামজাসের ছোট ভাইয়ের মেয়ের জামাই। তিনি মহারাজগঞ্জের বাসিন্দা ছিলেন। সেখানে পুত্রবধূর সঙ্গে দেখা হয় বড় শ্বশুরের দ্বিতীয় স্ত্রী মনসার সঙ্গে।
কথোপকথন শুরু হলে মানশা রামজাসের সুস্থতার কথা জিজ্ঞেস করতে থাকে। শ্বশুর এর প্রতি শ্বাশুড়ির আবেগী অনুরাগ দেখে পুত্রবধূর মনে আশার আলো জাগে যে, উদ্যোগ নিলে দুজনেই বৃদ্ধ বয়সে একে অপরের সহায় হতে পারে। পরিচয় ও কথোপকথনে মনশা জানান, তিনি আর বিয়ে করেননি, তিনি রামজাসের নামেরই সিঁদুর সিঁথিতে পড়েন।
এর পরে পুত্রবধূ বড় শ্বশুর ও শাশুড়িকে পুনরায় মিলিত করার সংকল্প করেন। মঙ্গলবার দুই দশকের অপেক্ষার অবসান হলো। মনশা তার ছেলেকে নিয়ে তার শ্বশুর বাড়িতে পৌঁছয়, যেখানে রামজাস তার ছেলে এবং পুত্রবধূকে নিয়ে মনশাকে স্বাগত জানায়। ছেলে ও পুত্রবধূরও সৎ শাশুড়ির প্রতি কোনো বিরক্তি ছিল না। ষাট বছর বয়সে স্বামী-স্ত্রীর দেখা হয়। সব অভিযোগ দূর হয়ে গেল।