আমিনা (নাম পরিবর্তিত) যখন দাদুর কাছ থেকে মাসির কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ল, তখন সম্ভবত পুলিশেরও চোখ ভিজে গিয়েছিল। যাঁরা ছিলেন, সকলেরই চোখেমুখে স্বস্তি। মাসিকে আঁকড়ে ধরেছে একরত্তি। আপাতত অবশ্য সে রয়েছে কলকাতায় শিশুদের একটা হোমে, মাসির কাছে নয়।
কিন্তু কেন ফুটফুটে আমিনার ঠাঁই হোমে? তা হলে ফিরতে হবে সোমবারের ঘটনায়।
হেস্টিংস এলাকায় বাচ্চাদের নিয়ে একটি স্কুল চালায় ‘প্রান্তকথা’ নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সেখানেই আঁকত, পড়ত আমিনা। কিন্তু সে সেদিন আসেনি। বরং হন্তদন্ত হয়ে তার মাসি আসেন। এসে জানান, আমিনাকে জোর করে নিয়ে চলে গেছেন ওর দাদু। ডায়মন্ড হারবারে। সেখান থেকে ওকে ৩০ তারিখ আজমের নিয়ে যাওয়া হবে। মাসির কথায়, ‘আমিনার মা ওখানে থাকে। বলেছে, আমার টাকার দরকার, মেয়েকে বিক্রি করে দেব। আমার মেয়ে, আমি যাই-ই করি, তাতে তোর কী?’
এর পরে আর কালবিলম্ব করেনি সংগঠনটি। তারা শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনকে পুরো বিষয়টি জানায়। কলকাতা সিডব্লিউসি-র চেয়ারপার্সন মহুয়া শূর রায় সঙ্গে সঙ্গে ডায়মন্ড হারবার পুলিশকে নির্দেশ দেন, বাচ্চাটিকে সোমবারের মধ্যেই উদ্ধার করে সিডব্লিউসি-র সামনে উপস্থিত করতে।
সংগঠনটি বাচ্চাটির মাসিকে নিয়ে ডায়মন্ড হারবার থানায় যায়। সেখান থেকে পুলিশের টিম তাদের নিয়ে গন্তব্যে রওনা দেয়। কিন্তু প্রবল বাধার মুখে পড়েন তাঁরা। আমিনার দাদু তাকে দিতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘ওকে ওর মা চেয়েছে। আমি ওকে নিয়ে আজমের যাব ৩০ তারিখ। সে দিনের টিকিট কাটা হয়ে গেছে।’ তাঁকে বোঝানোর চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। তার পর আরও বড় টিম নিয়ে পুলিশ আসে। অবশেষে আমিনা উদ্ধার হয় এবং মাসিকে দেখে তাঁর কোলে ঝাপিয়ে পড়ে। এর পর নিয়ম মেনে আমিনাকে রাতেই কলকাতার সিডব্লিউসি-র সামনে হাজির করানো হয়। তাদের নির্দেশ অনুযায়ী, বাচ্চাটি এখন হোমে রয়েছে।
এবার প্রশ্ন হলো, মায়ের কাছে কেন আমিনা থাকে না?
আমিনার মাসির দাবি, তাঁরা বছর দেড়েক আগে আজমেরে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে দেখেন আমিনার মা-বাবা তাকে ছেঁকা দেয়, ঘরের মধ্যে বন্ধ করে রাখে। খেতে দেয় না নিয়মিত। খিদেতে মাটি খায় বাচ্চাটা। আর নিজেরা বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ায়। মাদক নেয়, চুরি করে ইত্যাদি। এই দেখে বাচ্চাটিকে ছেড়ে আসতে পারেননি মাসি। তিনি আমিনাকে নিয়ে আসেন কলকাতায়। সেই থেকেই বাচ্চাটি মাসির কাছে।
মাসি কলকাতা পুরসভার ঠিকে কর্মী। কোনও মতে সংসার চলে। কিন্তু সেই অনটনের জন্য তিনি তাঁর বোনের অনৈতিক কাজকে সমর্থন করতে পারেননি। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘সবাই মিলে কাজ করে বাচ্চাটিকে বিরাট বিপদ থেকে বাঁচানো গিয়েছে। আমরা চাই ওর ভবিষ্যৎ সুন্দর হোক।’
শেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত, আমিনা তার ‘নতুন স্কুলে’ ভালোই আছে। ও খুবই মিশুকে। ফলে, নতুন বন্ধু, খেলনা পেয়ে সে-ও খুশিই।