Dainik Sangbad – দৈনিক সংবাদ
Image default
ট্রেন্ডিং

নিঃশব্দ দংশন কালাচের, সময়মতো অব্যর্থভাবে উপসর্গ চিহ্নিত করে রোগীর প্রাণ বাঁচালেন Group D কর্মী!

মৃত্যু এবং কালাচ যেন ঠিক একে ওপরের সমার্থক! মানুষকে মৃত্যু মুখে পতিত করতে এই সাপের ১ মিলিগ্রাম বিষই যথেষ্ট। বর্ষার শুরুর সময় এশিয়ার বিষাক্ততম এই সাপই গ্রাম বাংলার সবচেয়ে বড় আতঙ্ক। কালাচের দংশনে থাকে না কোনও জ্বালাযন্ত্রণা, দংশনস্থলে দেখা যায় না কোনও চিহ্নও। যত সময় যায় আস্তে আস্তে ‘শিবনেত্র’ হয়ে ঝিমিয়ে পড়ে রোগী। জড়িয়ে আসে কথা। আর এর ১ ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু অবধারিত। সময়মতো চিকিৎসা না পেলে মৃত্যু নিশ্চিত। কালাচ দংশনের জটিল উপসর্গ চিহ্নিত করা যেখানে চিকিৎসকদের জন্যই কঠিন কাজ, সেখানে একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী অব্যর্থভাবে, একেবারে সঠিক সময়ে তা ধরে ফেলে বয়স্ক মহিলার প্রাণ বাঁচালেন! এই কাজটি যিনি করেছেন তার নাম পরেশ ভঞ্জ। পূর্ব মেদিনীপুর (East Midnapore) জেলার দক্ষিণ দামোদর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের গ্রুপ ডি কর্মী তিনি।

women got biten by kalach snake diagnosis by group D saved life

ঠিক কি হয়েছিল?
কয়েক দিন আগে পূর্ব মেদিনীপুরের দক্ষিণ দামোদর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিজেদের পঁয়ষট্টি বছর বয়সী মাকে নিয়ে হাজির হন তার দুই ছেলে। সেসময় ডিউটিতে ছিলেন চিকিৎসক ডাঃ অনুপম জানা। দুই ছেলে জানায়, মায়ের ডান পায়ে কালো রঙের কোনো সাপ কামড়েছে। কিন্তু মহিলার না আছে কোনও উপসর্গ, না কামড়ের কোনও দাগ। পূর্ব মেদিনীপুরে বিষাক্ত চন্দ্রবোড়া সাপের দাপট এই সময়। তাই চিকিৎসক চন্দ্রবোড়ার দংশনে মহিলা বিদ্ধ কি না তা জানতে মহিলার 20WBCT করতে দেন। যার ফলাফল দেখে এই সাপের কামড় বোঝা যায়। যদি রোগীর রক্ত জমাট না বাঁধে, তবে বুঝতে হবে চন্দ্রবোড়া দংশন করেছে। কিন্তু এই বৃদ্ধার 20WBCT রিপোর্টে দেখা যায় রক্ত জমাট বেঁধেছে। অর্থাৎ তিনি চন্দ্রবোড়া সাপের কামড় খাননি। এরপর চিকিৎসক অনুপম জানা বলেন রোগী সুস্থই আছেন। কিন্তু কিছুক্ষন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যবেক্ষণে রাখতে চান। বাড়ির লোক ওই মহিলা কে নিয়ে ফিরতে চাইলেও ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নার্স প্রায় জোর করেই মহিলাকে পর্যবেক্ষণে রাখেন। ইতিমধ্যে ডাঃ অনুপমবাবু দুপুরের বিরতিতে নিজের কোয়ার্টারে চলে যান। বিকেল ৫টায় তার আবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসার কথা। তিনি কোয়ার্টারে ফেরার ঘণ্টা খানেকের মধ্যে আচমকাই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পরেশ ভঞ্জ তাঁর কোয়ার্টারে দৌড়ে আসেন। বলেন, তিনি নিশ্চিত যে ওই মহিলাকে কালাচ সাপই কামড়েছে। মহিলার মধ্যে কালাচ দংশনের সকল উপসর্গ দেখা দিচ্ছে।

এটা শুনে আর দেরি করেননি ডাঃ অনুপম জানা। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে বোঝেন পরেশবাবুর ঠিক সময় মতন খবর দিয়েছে। কালাচেই কামড়েছে মহিলাকে। বৃদ্ধা কে পর পর ১০টি অ্যান্টিভেনাম ইঞ্জেকশন দিয়ে দেন। আস্তে আস্তে মহিলার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়। সম্পূর্ণ রূপে সুস্থ হয়ে শুক্রবার বছর পঁয়ষট্টির ওই মহিলা বাড়ি ফিরেছেন। তবে তাঁর বেঁচে ফেরার কৃতিত্ব ডাঃ অনুপম জানা দিয়েছেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী (Group D Staff) পরেশ ভঞ্জকেই। পরেশবাবুর নিখুঁত Clinical Diagnosys সকলকেই অবাক করেছে। গ্রামবাংলায় সাপের কামড় এবং তার চিকিৎসা ভীষণই গুরুত্বপূর্ন। তাই গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির সমস্ত কর্মীকে এই সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে এত সফলভাবে এই প্রশিক্ষণ মনে রেখে প্রয়োগ করতে পারবেন পরেশবাবু, তা ভাবেননি বোধহয় কেউই।

Related posts

মা-বাবা বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে না! বেলচা দিয়ে কুপিয়ে খুন করলো রাগে ক্ষিপ্ত ছেলে

News Desk

৪০ লাখ টাকার সার্জারি করে নিজেকে নিখুঁত করতে চেয়েছিলেন মহিলা! হলো হিতে বিপরীত

News Desk

‘মহামারী কাউকে নিস্তার দেবে না’, স্ত্রী-সন্তানদের খুন করে ‘মুক্তি’ দিলেন মানসিক অবসাদগ্রস্ত চিকিৎসক

News Desk